বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: থিমের জৌলুসে একে অপরকে টেক্কা দেওয়া নয়। ঐতিহ্যকেই বয়ে নিয়ে চলেছে তারা। সাবেকিয়ানার টানে আজও মানুষ ভিড় জমান মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় (Mahishadal Rajbari)।


নিয়ম মেনে পুজোর আয়োজন: প্রতিপদ থেকেই শুরু হয় মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। জৌলুস, আড়ম্বর কমেছে। তবে রীতিতে পড়েনি ছেদ। নিয়ম মেনেই প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। থিমের টক্কর নয়,ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান বহু মানুষ। প্রতিমা দর্শন করতে আসেন ভিন জেলার দর্শনার্থীরাও।


প্রায় ১৭৭৮ সালে মহিষাদল রাজবাড়ির রানি জানকীর আমলে রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে। কিন্তু, নিয়ম-আচারে ছেদ পড়েনি। তাই প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন ঘটস্থাপন করে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। মহিষাদল রাজবাড়ি দূর্গাপুজোর ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে ১০৮টি নীল পদ্ম আনা হত, কিন্তু এখন তা হয় না। স্থানীয়ভাবে তা সংগ্রহ করা হয়। রাজবাড়ির রীতি মেনে রাজাদের শিকারের তলোয়ার মায়ের পায়ের তলায় রেখে পুজো করা হয়। প্রতিমার একপাশে ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়। এই দুর্গাপুজো করার পরই শুষ্ক গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভাল ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়।


আগে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা, ভোগ বিতরণ, কামান দেগে সন্ধিপুজো, বিসর্জনের শোভাযাত্র সবই হত। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানেই যাত্রা হত। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে যাত্রা দেখতেন। পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন, ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। অষ্টমীর সন্ধেয় কামান দেগে রাজবাড়ি সহ আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা বেরোত এবং রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানেল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। এখন সে সবই অতীত।


মহিষাদল রাজবাড়ির পুজোতে আগে পর্দার আড়াল থেকেই সবকিছু দেখতে হত বাড়ির মহিলা সদস্যদের। এখন সেই আড়াল উঠে গিয়ে সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন রাজবাড়ির মহিলা সদস্যরা। আর এই সাবেকিয়ানার টানে শুধুমাত্র এলাকার বাসিন্দারাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন এই মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয়। রাজবাড়ির এই ঐতিহ্য সাবেকিয়ানার টানে বারোয়ারি আর পাঁচটা পুজোর মাঝে মানুষের মনে এখনও মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।  


আরও পড়ুন: Durga Puja 2024: এক নয়, দেবীর পরনে চার শাড়ি, ৫০০ বছরের ঐতিহ্য মেনে পুজোর আয়োজন বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে