কলকাতা: কয়লাকাণ্ডে (Coal Scam Case) এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate/ED) দিল্লিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) তলব করেছে ইডি। অন্যদিক ইডি সূত্রে খবর, ওই দিনই তাদের তিন আধিকারিককে ডাকা হয়েছে কালীঘাট থানায়। প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।


রবিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লি রওনা দেন অভিষেক। কলকাতা বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “যারা তদন্তকারী সংস্থাকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে তারা আর অভিষেক এক নয়। রক্ত দেব, কিন্তু মাথানত করব না।”


কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। এক দিন আগেই দিল্লি রওনা দিন তিনি। গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তোলেন। আর ঠিক সোমবারই ইডি-র তিন আধিকারিককে তলব করেছে কালীঘাট থানা। ইডি সূত্রের খবর, কয়লা এবং গরুপাচার কাণ্ডের তদন্তে নিযুক্ত ইডি-র ৩ আধিকারিককে তলব করা হয়েছে। অন্য একটি মামলায় আধিকারিকদের সমন করা হয়েছে কালীঘাট থানায়। আর এই নিয়েই সরগরম রাজ্য-রাজনীতি।


উল্লেখ্য, গতবছর রাজারহাট-নিউটাউনের সিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভাইরাল হয় একটি অডিও ক্লিপ। তাতে যে কথোপকথন শোনা যায়, তা হল


কণ্ঠ ১ : সিন্ডিকেট কী? সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক শুনেছি। কাগজেও পড়েছি সিন্ডিকেটের কথা।


কণ্ঠ ২: সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলায় পেট ভরে।


কণ্ঠ ১ : সিন্ডিকেট আসলে কী?


কণ্ঠ ২: এই যে রাজারহাট-নিউটাউনে নির্মাণ কাজ চলছে, সেখানে রাজনৈতিকভাবে সিন্ডিকেট তৈরি করে দেওয়া হয়। বালি, পাথর, ইটের মতো কোনও সামগ্রী কিনতে গেলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিতে হবে। এভাবেই সিন্ডিকেট বিখ্যাত হয়ে গেছে।


কণ্ঠ ১ : সিন্ডিকেটের টাকা কোথায় যায়?


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee Updates: 'কাগজে মুড়ে টাকা নেওয়া দেখতে পায় না ইডি', কয়লাকাণ্ডে দিল্লি যাওয়ার আগে মন্তব্য অভিষেকের


এবিপি আনন্দ এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি। তবে গত বিধানসভা ভোটের মুখে এই অডিও ক্লিপ তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল রাজ্যজুড়ে। বিজেপি দাবি করে, ভাইরাল অডিও ক্লিপে ব্যবসায়ী গণেশ বাগাড়িয়ার কণ্ঠস্বর শোনা গেছে। যিনি এক ইডি  অফিসারের সঙ্গে কথা বলছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।


পুলিশ সূত্রে দাবি, সেই ঘটনায় কালীঘাট থানায় একটি অভিযোগ জমা পড়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার কয়লা ও গরুপাচারকাণ্ডে ইডি-র প্রধান তদন্তকারী অফিসার, এক জন সুপারভাইজিং অফিসার এবং এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসারকে তলব করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর,  সোমবার বেলা ১২ থেকে দুপুর ১টার মধ্যে কালীঘাট থানায় হাজিরা দিতে নোটিস পাঠানো হয়েছে তাঁদের।


এই প্রেক্ষাপটেই প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ। তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “অভিষেককে ২০১৯ থেকে প্রতিহিংসার কারণে বারবার ইডি, সিবিআই ডেকে পাঠিয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, বিজেপিই তো এই কথা বলে। তাহলে পুলিশও ডাকতে পারে।”


অন্য দিকে, রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যাঁরা আধিকারিকদের তলব করেছেন, তাঁরা বুঝবেন, যাঁদের তলব করেছে, তাঁরা বলবেন।  এর সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নেই। টাকা ফেরত আসুক, সেটাই সাধারণ মানুষ চাইছেন।”


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা রাজনৈতিক চাপানউতরের মতো। এক বার এ ওকে ডাকছে, এক বার এ ওকে ডাকবে। এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যের নেতারা রাজ্যের নিরাপত্তা পাবে, আর বিজেপি-র নেতারা কেন্দ্রের নিরাপত্তা পাবে। এতে নিরপেক্ষ তদন্ত কলুষিত হচ্ছে।”


যদিও পুলিশ সূত্রে দাবি, এর আগেও ইডির ওই ৩ অফিসারকে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা আসতে পারবেন না বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন।