ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা :  সন্দেশখালি-সন্ত্রাসের এক সপ্তাহের মাথায় ফের অ্যাকশনে ইডি। তিন জায়গায় সকাল থেকে চলছে তল্লাশি-অভিযান। মন্ত্রী, বিধায়ক ও কাউন্সিলর, একযোগে তিন হেভিওয়েটের ঠিকানায় হানা দেয় ইডি। এদিন সাত সকালে মন্ত্রী সুজিত বসু ও বিধায়ক তাপস রায়ের বাড়িতে হানা দেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। এরপরই পুর নিয়োগ দুর্নীতির ( Municipal recruitment scam ) তদন্তে ইডি-র ( ED ) স্ক্যানারে উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তী।


সকাল সাড়ে ৬টা থেকে তাঁর বাড়িতে চলছে ইডি-র তল্লাশি অভিয়ান। সূত্রের খবর, পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোন জমা রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে । বাড়ির দোতলায় কথাবার্তা চলছে 


প্রভাব খাটিয়েই নিজের ছেলেমেয়েকে পুরসভায় চাকরি ?


২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তিনি। সামলেছেন পুর প্রশাসকের দায়িত্বও। উত্তর দমদম পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর মেয়ে বরানগর পুরসভায় চাকরি করেন আর ছেলে চাকরি করেন উত্তর দমদম পুরসভায়। সূত্রের খবর, প্রভাব খাটিয়েই নিজের ছেলেমেয়েকে পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন কিনা, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছে ইডি। 


রাজ্যের ৬০টি পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাতে নাম জড়িয়েছে উত্তর দমদম পুরসভার। সেই মামলার তদন্তে সুবোধ চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, বিরাটির খলিসাকোটা পল্লিতে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি-র আধিকারিকরা।  কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে হাজির হন কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীরা। বিরাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে ইডি-র অভিযান চলাকালীন, দমদম থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছে যায়। সকাল সাড়ে ৮ নাগাদ উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঢুকতেও চান তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী সেই অনুমতি দেয়নি। 


অন্যদিকে পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতেও শুক্রবার পৌঁছে যায় ইডি। সূত্রের খবর, দমকলমন্ত্রীর বাড়িতে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ ও নথি সংগ্রহ। এদিন ইডি-র আধিকারিকরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমির দুটি বাড়িতে পৌঁছে যান। 


আরও পড়ুন:


ফের অ্যাকশনে ইডি, সুজিত বসুর বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ, তাপস রায়ের বাড়িতে তল্লাশি 


গত বছরই ইডি দাবি করে, শিক্ষক নিয়োগের মতোই ভয়ঙ্কর দুর্নীতি হয়েছে পুরসভার কর্মী নিয়োগেও। আদালতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দাবি করে, বেশ কিছু অযোগ্য় চাকরিপ্রাপক, যাঁরা কিনা পরীক্ষায় বসা তো দূরস্ত, ফর্ম ফিল আপ পর্যন্ত করেননি, তাঁরাও টাকার জোরে চাকরি পেয়েছেন। ED র দাবি ছিল, অয়ন শীলের সল্টলেকের ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নথি ও তথ্য় মেলে। এছাড়াও মেলে নামের তালিকা, যাঁরা চাকরির জন্য় টাকা দিয়েছিলেন। ED সূত্রে দাবি, সেই তালিকা সার্টিফাই করেছিলেন বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স ও চেয়ারপার্সনরা। গত নভেম্বর মাসে রাজ্য জুড়ে রেশন দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই  পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তেও তেড়েফুঁড়ে নামে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন টিটাগড় পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী 
ও বরানগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক। 


এছাড়া গত অক্টোবরে পুর নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে ইডির পর একযোগে ১২ জায়গায় হানা দেয় সিবিআই । ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্রর বাড়ি ছাড়াও ১০ জায়গায় সিবিআই তল্লাশি চালায়। সিবিআই-নজরে ছিলেন দমদম, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, কৃষ্ণনগর, নিউ ব্যারাকপুর, টাকি পুরসভার  বর্তমান ও প্রাক্তন পুরপ্রধানরা। দমদম পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান হরেন্দ্র সিংহর বাড়িতেও সিবিআই হানা
দেয়। উত্তর দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তীর বিরাটির বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। হালিশহর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অংশুমান রায়ের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালায়। কাঁচরাপাড়ায় তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান সুদামা রায়ের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহাকে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখনই। নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতেও সিবিআই হানা দেয়। এছাড়া টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই।