আবির দত্ত, সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও ময়ূখঠাকুর চক্রবর্তী, বলাগড়: ইডির নজরে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি। আজ বলাগড়ে তাঁর ১০ কাঠা জমির ওপর গেস্ট হাউস, ব্যান্ডেলে তিনতলা বাড়ি এবং চুঁচুড়ায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে একযোগে তল্লাশি চালাল ইডি। কোথাও তালা ভেঙে ঢুকলেন অফিসাররা। কোথাও অত্যাধুনিক পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড লকিং সিস্টেমের মুখে পড়তে হল গোয়েন্দাদের (Santanu Banerjee)।
অভিযান চলল শান্তনু-ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের সল্টলেকের ভাড়া বাড়িতেও
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুগলি জুড়ে বিশাল সাম্রাজ্য। শনিবার তাঁর সম্পত্তির হদিশ পেতে একাধিক জায়গায় ম্যারাথন অভিযান চালাল ইডি।অভিযান চলল শান্তনু-ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের সল্টলেকের ভাড়া বাড়িতেও। বলাগড়ে, রীতিমতো নাটকীয়ভাবে, শান্তনুর গেস্ট হাউসের তালা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ভিতরে ঢোকেন ইডির অফিসাররা (SSC Case)।
একের পর এক দরজা ভাঙার পাশাপাশি ছাদে উঠে জলের ট্যাঙ্কেও চলল তল্লাশি। চুঁচুড়ায় বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে
আবার ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে লক করা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে হল আধিকারিকদের। শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টা নাগাদ সল্টলেকের CGO কমপ্লেক্স থেকে হুগলির উদ্দেশে রওনা দেয় ইডির একাধিক টিম।
এর পর, পৌনে ১০টা নাগাদ, ব্যান্ডেল চার্চের একেবারে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে, নিবেদিতা পার্কে পেল্লায় এই তিনতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় ইডি অফিসারদের গাড়ি। ইডি সূত্রে দাবি, চার কাঠা জমির ওপর বিশাল ওই বাড়িটি পুষ্পা মজুমদার নামে এক জনের থেকে জলের দরে কেনেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে এই বাড়িটির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কালো কাচের গাড়িতে দিনভর যাতায়াত ছিল শান্তনুর। তবে শেষ ছয় মাসে কেউ আসেননি। সম্প্রতি বেশি টাকায় ওই বাড়ি শান্তনু বিক্রির চেষ্টা করছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। এ দিন সকাল ১০.৩০টায় বলাগড়ের চাঁদরায় গঙ্গার ধারে ১০ কাঠা জমির ওপর শান্তনুর ওই বিলাসবহুল গেস্ট হাউসে পৌঁছন ইডির আধিকারিকরা।
গেটে তালা দেখে ইডি-র এক আধিকারিক নিজেই একটি দোকান থেকে হাতুড়ি নিয়ে এসে তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, শান্তনুর এই গেস্ট হাউসে আনাগোনা ছিল নীলবাতির গাড়ির। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে প্রভাবশালীদের কি যাতায়াত ছিল এখানে?
এর মধ্যেই, স্থানীয় এক যুবকের আবার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, যে দিন গ্রেফতার হন শান্তনু তার কয়েক দিনের মধ্যে মোচর বাইকেলে চেপে দু'জন এসেছিলেন সেখানে।
ইডি সূত্রে দাবি, ওই বাড়ি থেকে প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে। চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়াতেও এ দিন হানা দেয় ইডি। তাদের দাবি, বিলাসবহুল এই আবাসনের থার্ড ফ্লোরে ১৬০০ স্কোয়ার ফুট করে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ফ্ল্যাটের দরজায় লাগানো অত্যাধুনিক পাসওয়ার্ড প্রটোক্টেড লকিং সিস্টেম। একমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা থাম্ব ইম্প্রেসনর মাধ্যমেই তা খোলা যায়।
আবাসনের প্রোমোটার ও শান্তনু ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের সঙ্গে কথা বলেন ইডির আধিকারিকরা। তারপর কাঠের মিস্ত্রি ডেকে লক খুলিয়ে ভিতরে ঢোকেন। ইডি সূত্রে দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনুর একাধিক হোটেল, রিসর্টের প্রোমোটিংয়ের মূল দায়িত্ব ছিল এই অয়ন শীলের কাঁধেই।
শান্তনুর ফ্ল্যাটে ডেকেই প্রোমোটার অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসবাদ
একইসঙ্গে এদিনই সল্টলেকের FD ৩৮৮-তে অয়ন শীলের ভাড়া বাড়িতেও হানা দেন ইডির অফিসাররা। বাড়ির মালিক জানান, প্রযোজনা সংস্থা গড়বেন বলে বছর তিনেক আগে বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। একটি সিনেমা হলেও, সেটি মুক্তি পায়নি বলেও দাবি করেন তিনি। প্রোমোটার না থাকায়, তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। অয়ন শীলকে আটক করেছে ইডি। শান্তনুর বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক। শান্তনুর ফ্ল্যাটে ডেকেই প্রোমোটার অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়।