কলকাতা: এলগিন রোডের (Elgin Road) গেস্ট হাউসে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে খুন। গতকাল রাত ১০.১৫ মিনিটে ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ। মুক্তিপণ নেয় আততায়ী। মুক্তিপণ নেওয়ার পর মৃতের পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষা করতে বলে আততায়ী। এমনটাই দাবি মৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ীর পরিবারের। মুক্তিপণ নেওয়ার আগেই খুন? গতকাল সন্ধে ৭ ব্যবসায়ীকে বাড়িতে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। পুলিশকে জানালে গলা টিপে খুন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি মেলে’, দাবি মৃতের পরিবারের। টেলিফোনের তারের ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন, অনুমান তদন্তকারীদের। 


সন্ধেয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে হঠাৎই নিখোঁজ! তারপর নিখোঁজের মোবাইল থেকেই মুক্তিপণ চেয়ে ফোন! অপহরণকারীদের হাতে মুক্তিপণের টাকা তুলে দিল পরিবার! কিন্তু, তারপরও শেষ রক্ষা হল না! সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর, গেস্ট হাউসের ঘর থেকে উদ্ধার হল ৬৬ বছরের ব্যবসায়ীর মৃতদেহ। 


অবিন্যস্ত পোশাক। ঘরে পড়ে লুব্রিক্যান্ট। পুলিশ সূত্রে খবর, এক তরুণের সঙ্গে গেস্ট হাউসে গেছিলেন ব্যবসায়ী। এলগিন রোডের এই ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে কলকাতায়। তবে কি ওই তরুণ ব্যবসায়ীর পূর্ব পরিচিত ছিল? পরিচত তরুণের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিল মৃত ব্যবসায়ীর?


তদন্তকারীদের দাবি, এই ঘটনা শুধু এক ব্যবসায়ীর অপহরণ এবং খুন নয়! তার নেপথ্যে রয়েছে গভীর রহস্য। মৃত শান্তিলাল বৈদ্য বড়বাজারের ব্যবসায়ী। থাকেন ভবানীপুরের লি রোডে। পরিবারের দাবি, সোমবার সন্ধে পৌনে সাতটা নাগাদ শান্তিলাল বৈদ্য পান কিনতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরোন।


সন্ধে সাতটা পাঁচ নাগাদ ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন আসে। বলা হয় শান্তিলালকে অপহরণ করা হয়েছে। ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। টাকা না দিলে আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। অপহরণকারীদের কথা মতো, ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে এসএসকেএমের উল্টোদিকে ভিক্টোরিয়ার সাউথ গেটের কাছে পৌঁছোন শান্তিলাল বৈদ্যর পরিবারের সদস্যরা। 


রাত দশটা পনেরো নাগাদ একটি ট্যাক্সিতে তাঁরা টাকাভর্তি ব্যাগ রেখে দেন। পরিবারের দাবি, ট্যাক্সিতে থাকা ব্যক্তি বলে, আধঘণ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী বাড়িতে পৌঁছে যাবেন। যাওয়ার সময়, ট্যাক্সি থেকে ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন ছুড়ে ফেলে দিয়ে যায় সে। 


একঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্য বাড়ি না ফেরায়, পরিবারের লোকজন ভবানীপুর থানার দ্বারস্থ হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, ব্যবসায়ীর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে জানা যায়, তিনি এলগিন রোডের একটা গেস্ট হাউসে গেছিলেন। বাইরে থেকে বন্ধ একটা ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় ষাটোর্ধ্ব শান্তিলাল বৈদ্যর মৃতদেহ। গলায় টেলিফোনের তার পেঁচিয়ে, তাঁকে খুন করা হয় বলে পুলিশের অনুমান। 


তদন্তকারীদের দাবি, শান্তিলাল বৈদ্য অবিন্যস্ত পোশাকে ঘরের মধ্যে পড়ে ছিলেন। ঘরের মধ্যে লুব্রিক্যান্টও মেলে। পুলিশ সূত্রে দাবি, গেস্ট হাউসের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে,  সোমবার রাতে এক তরুণের সঙ্গে গেস্ট হাউসে যান ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্য। ওই তরুণ ব্যবসায়ীকে নিজের আঙ্কল বলে পরিচয় দেয়। 


রাতে চেক আউট না করে, ওই তরুণ গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে যায়। এই ঘটনা ঘিরে বহু প্রশ্ন ভিড় করেছে। শান্তিলাল বৈদ্য ওই তরুণের সঙ্গে গেস্ট হাউসে কেন গেছিলেন? সে কি শান্তিলাল বৈদ্যর পূর্ব পরিচিত? ওই তরুণই কি ব্যবসায়ীকে খুন করেছে? শান্তিলাল বৈদ্যকে কি আদৌ অপহরণ করা হয়েছিল? নাকি তিনি স্বেচ্ছায় গেস্ট হাউসে গেছিলেন? তাঁর আপত্তিকর ছবি ফাঁসের হুমকি কেন দেওয়া হল? ঘরের মধ্যে লুব্রিক্যান্ট কেন ছিল?


পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্ত তরুণকে হাওড়া স্টেশনের দিকে যেতে দেখা গেছে। এদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর আনা হয়। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।