মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: সিকিম বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ ফলতার ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক রাহুল দেব মাজি। মূলত পুজোর সময় ছুটি মিলবে না, তাই আট বন্ধুকে নিয়ে গত মাসের শেষে সিকিম বেড়াতে গিয়েছিলেন ইএসআই ফলতার জুনিয়র চিকিৎসক রাহুল দেব মাজি। কিন্তু আজ অক্টোবরের ৭ তারিখ, এখনও নিখোঁজ ওই চিকিৎসক। উদ্বেগে গোটা পরিবার।
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ডক্টরস কলোনির প্রীতিলতা ওয়েদ্দার সরনির বাসিন্দা রাহুল দেব মাজি। দুর্গাপুর , বর্ধমান ও কলকাতার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বর্ধমানেরই এক ট্রাভেল এজেনসি মারফত, গত ৩০ তারিখ সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে সিকিমের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তিনি।গত তিন তারিখ রাত্রি ন টা নাগাদ শেষ বারের মতো পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। এরপর থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না রাহুলের সঙ্গে। একমাত্র ছেলের চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে এখন এই পরিবারের। বাকি বন্ধুদের সঙ্গে এবং ওই বর্ধমানের ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, সিকিমের ঘটনায় রাজ্যের একাধিক জেলাতেই ইতিমধ্যে শোকের ছায়া পড়েছে। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা গ্রামের বছর ২৪ এর শেখ সুমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর কাজে গিয়েছিল সিকিমের জেমা এলাকায়। তিস্তার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পর, তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি পরিবারের লোকজন। উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে বারংবার বিষ্ণুপুর থানায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। সুমনকে ফোন করলে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও খোঁজ মেলেনি শেখ সুমনের।
গত ৩ অক্টোবর পরিবারের সাথে শেষ বারের মতো কথা হয়। পরিবারকে জানিয়েছিল বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ। ডিসেম্বর মাসে বিষ্ণুপুর মেলার সময় সে বাড়ি ফিরবে। কান্নায় ভেঙে পড়ছে পরিবার। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন যাতে তাদের ছেলে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরে। কবে ফিরবে বাড়িতে সুমন সে আশায় বুক বেঁধেছে পরিবার পরিজন।
মূলত মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং তার জেরে হড়পা বান, দুইয়ের জেরে বাঁধভাঙা বন্যায় ভেসে গিয়েছে সিকিম। সিকিমে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯।যে তিস্তা বছরভর পর্যটকদের মন ভোলায়, এবার তার ভয়াল রূপ কেড়ে নিয়েছে জীবন। সিকিমের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। মূলত সিকিমের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ফুঁসছে তিস্তা। এর মধ্যেই তিস্তার জলে বাংলায় ভেসে এসেছে আরও ২২ জনের দেহ।
আরও পড়ুন, BJP মহিলা কর্মীকে অ্যাসিড হামলায় 'পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার' অভিযোগ কমিশনের
৪ অক্টোবর, বুধবার একেবারে ভোররাতে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয় সিকিমে, হিমবাহ হ্রদ ভেঙে বিপুল পরিমাণ জল নামে তিস্তা নদীতে। তার জেরেই হঠাৎ বেড়ে যায় তিস্তার জলস্তর।১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কিছুটা অংশ ভেঙে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে চুংথাং বাঁধও। তিস্তার জল বেড়ে গিয়ে একাধিক ছোট শহর, একাধিক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু কূল ছাপিয়ে বইছে তিস্তা। তার জেরেই প্রবল জলের তোড়ে ধুয়ে মুছে সাফ সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকা। কালচিনি-ময়ূরেশ্বরের দুই জওয়ানের মৃত্যু। নিখোঁজ শতাধিক। আটকে ৭ হাজার পর্যটক।