বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: একসময়ে খড়্গপুরের (Kharagpur) 'বেতাজ বাদশা'ছিলেন তিনি। শোনা যায়, বাসব রামবাবুর (Basab Rambabu) ভয়ে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। রেলশহরের সেই প্রাক্তন 'রাজা'-ই (Ex Mafia Don) এবার সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করলেন, আর নয়। এবার জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসবেন তিনি। 


কী বললেন খড়্গপুরের 'প্রাক্তন ডন'?
দীর্ঘকাল জেলে বন্দি থাকার পর সদ্য রেলশহরে ফিরেছেন তিনি। খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকায় নিজের বাসভবনে শনিবার বিকেলের  সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, এবার মূলস্রোতে ফিরে আসবেন। 'প্রাক্তন ডন'-র এমন ঘোষণা শুনে কী প্রতিক্রিয়া শ্রীনু নাইডুর পরিবারের? ২০১৭ সালে শ্রীনু-কে খুনের অভিযোগেই জেলে যেতে হয়েছিল বাসব রামবাবু-সহ ১৩ জনকে। তবে গত মাসে তাঁদের প্রত্যেককে বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেয় মেদিনীপুর আদালত। জেল থেকে বাড়ি ফিরে মূলস্রোতে ফেরার কথা জানিয়ে দিলেন রেলশহরের প্রাক্তন দাপুটে 'ডন'। কিন্তু আক্ষেপের কথা লুকোননি। বাসব রামবাবুর কথায়, 'আগে খড়গপুর শহরে শান্তি বিরাজ করত। এখন সেই শান্তি নেই।' কেন? তাঁর মতে, খড়্গপুরের বাড়িতে, বাড়িতে,অলি-গলিতে এখন 'দাদা' তৈরি হয়েছে। তাতেই গণ্ডগোল। তবে এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করতে রাজি নন তিনি। বরং 'শর্টকাটে' ধনী হওয়ার চেষ্টাতেই রেলশহরে 'দাদাগিরি' বাড়িয়েছে, মনে করেন তিনি। এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও পুলিশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, মত বাসব রামবাবুর। কিন্তু যে শহরে ছাঁট লোহার ব্যবসায় খোলামকুচির মতো টাকা ওড়ার 'ঐতিহ্য'রয়েছে, যার হাত ধরে একাধিক মাফিয়ার উত্থান বলে গুঞ্জন, সেখানে এমন  'দাদাগিরি'কি খুব অভাবনীয়?


ফিরে দেখা...
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস। খড়্গপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দলীয় দফতরের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি সাদা রঙের মারুটি ওমনি গাড়ি। ভিতর থেকে নেমে আসে দুষ্কৃতীরা। দফতরের ভিতর বোমা চার্জ করে। ভিতরে তখন শ্রীনু নাইডু ও তার এক সাগরেদ। প্রাণ বাঁচাতে তারা তখন শৌচালয়ে লুকিয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অভিযোগ, শৌচালয়ে ঢুকে গুলি করে দু'জনকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। খড়্গপুরে তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ শ্রীনুর। তাঁর স্ত্রী, বিজেপির টিকিটে পুরনির্বাচনে জিতে এসেও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শ্রীনু নিজেও তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। এমন সময় কে খুন করল তাকে? তদন্তে উঠে আসে বাসব রামবাবুর নাম ও তার সঙ্গে শ্রীনুর পুরনো সখ্যের কাহিনি। কী সেই কাহিনি? অন্য দু'টি খুনের অভিযোগে বাসব রামবাবু তখন জেলে। সেই সময়ই ছোটখাটো অপরাধের জন্য জেলবন্দি হয়েছিল শ্রীনুও। দু'জনের আলাপ সেখানেই। তার পর কী হয়েছিল, তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না। তবে সম্ভবত শ্রীনু যে প্রতিশ্রুতি রামবাবুকে দিয়েছিল, জেল থেকে বেরোনোর পর তা রাখেনি। এখন অবশ্য জল্পনার জায়গা নেই। আদালত বেকসুর খালাস করেছে বাসব রামবাবুকে। গত কয়েক বছরে চুলে পাক ধরেছে খড়্গপুরের মুকুটহীন সম্রাটের। 
জেলের বাইরের জীবনটা তাই মূলস্রোতেই কাটাতে চান তিনি।


আরও পড়ুন:'বিরোধীশূন্য হওয়াটা শাসককে অসুবিধেই করে' পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মুখ খুললেন শোভন