কলকাতা : সাপের কামড় (Snake Bite) বলা ভাল সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু বাংলায় ঠিক কতটা বড় সমস্যা ? একটা পরিসংখ্যান সামনে রাখা যাক। রাজ্য সরকারের তথ্য জানাচ্ছে, গত বছরে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১০-র কম। আর সাপের কামড়ে ? সংখ্যাটা ৩৬০ ! বেসরকারি সূত্রের দাবি, সংখ্যা ৬৫০-র থেকেও বেশি !


বর্ষাকালে (Monsoon) প্রকোপ বাড়লেও কার্যত সারাবছরই সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবর মেলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে। গ্রাম বাংলায় সংখ্যাটা বেশি হলেও তা থেকে বাদ নেই শহরতলী বা শহরও। বাংলায় ১২০ থেকে ১২৫ ধরণের সাপ থাকলেও মাত্র ৪ ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে। যাদের কামড়েই চিকিৎসায় দেরি হলে হতে পারে মৃত্যু। সাপে কামড়ালে কীভাবে বুঝবেন তা বিষধর কি না ? বা সাপে কামড়েছে বুঝতে পারলে করবেনই না কী ? বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে এবিপি লাইভ বাংলা পৌঁছে গিয়েছিল বাংলার 'সাপ ডাক্তারের' কাছে। চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার (Dayal Bandhu Majumdar)। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্পদংশন বিভাগের পরামর্শদাতা। 


কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া ও কালাচ (কালাচিতি) এই চার ধরনের বিষধর সাপ পাওয়া যায় বাংলায়। প্রথম দুই ধরনের সাপ ফণা-যুক্ত। কেউটে (Cobra) ও গোখরো এই দুই ধরনের সাপের কামড় মাত্রই শুরু হয়ে যায় ভয়ঙ্কর জ্বালা-যন্ত্রণা। ঘুমের মধ্যে কাউকে কামড়ালে বা নেশাগ্রস্থ কাউকে কামড়ালে ঘুম বা নেশা ছুটে যেতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। আর ফণা-হীন দুই ধরণের বিষধর সাপের মধ্যে চন্দ্রবোড়ার দাঁত খুবই ধারাল, সেক্ষেত্রেও দাগ বা খানিক পর থেকে জ্বালা-পোড়া শুরু হতে পারে। জায়গাটা আস্তে আস্তে ফুলতে শুরু করে। কিন্তু কালাচ বা কালা-চিতি সাপের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। 'মশার মতো সুক্ষ্ম এমন কামড় হয় যে দাগই পাওয়া যায় না কালাচের কামড়ে', বলেই জানালেন বাংলার সাপ ডাক্তার। কোনও কিছু বোঝা না গেলেও পরের দিকে শুরু হয় নানা সমস্যা। যেমন গাঁটে গাঁটে ব্যথা বা পেটে ব্যথা। 


কেউটে, গোখরো ও কালাচের ক্ষেত্রে সাপের বিষ শরীরে যাওয়ার পর খানিক পর থেকেই তা প্রভাব ফেলে মানুষের স্নানুতন্ত্রে। এই ধরণের বিষধর সাপের বিষকে বলা হয়ে থাকে নিউরোটস্কিক (Neuro Toxic)। যার ফলে সাপে কাটার ক্ষেত্রে রোগীর চোখের পাতা পড়ে আসতে থাকে। চোখ খুলে রাখতে গেলেও প্রচণ্ড সমস্যা হয়। বাংলায় যাকে বলে শিবনেত্র। ইংরেজি প্রতিভাষা টসিস (Tosis)। আর চন্দ্রবোড়ার কামড়ের জেরে বিকল হতে শুরু করে রোগীর কিডনি।


সাপে কামড়ালে বুঝতে পারা গেলে না না গেলেও তাহলে কী করবেন ? দয়ালবন্ধু মজুমদারের কথায়, প্রথমেই বুঝতে পারলে বাড়তি কোনও ছোটাছুটি করবেন না। আর দ্রুত কাউকে বলে পৌঁছে যেতে হবে কাছের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (Primary Health Centre)। বাংলার প্রত্যেকর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে রাতে রোগী ভর্তি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে নিয়ে গেলেই সাপে কাটার ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা হবে। দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, 'সাপ দেখে চিকিৎসা করা হয় না। মাত্র ২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোন সাপ কামড়েছে, সেটাকে ধরা যায়। তাই সাপ ধরে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হবে এই ধারণা ভ্রান্ত। তাতে সময় নষ্টের পাশাপাশি অন্য আরও কারোর সাপের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা থাকে।'


ভারতে সব রকমের সাপের কামড়ের জন্যই একটি মাত্র অ্যান্টিভেনাম ব্যবহৃত হয়। যার নাম পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম (Polyvalent Antivenum)। তামিলনাড়ুর মহাবলীপূরমের ইরুলা সোসাইটিতে যা তৈরি হয়ে গোটা দেশে পৌঁছে যায়। সাপে কামড়ালে ভয় না পেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে গেলেই সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব। 



 


আরও পড়ুন- চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার ঠিক আগে কেমন ছিল দৃশ্য ? বিক্রমের চোখে চাঁদে পা


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial