মুন্না আগরওয়াল, দক্ষিণ দিনাজপুর: মুখ্যমন্ত্রীর (Chief Minister) দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ছায়াসঙ্গী হিসেবে নিজেকে দাবি করে, ভরা সভায় বক্তৃতা দিয়ে হাততালি কুড়োলেন যিনি, তিনিই কি না ভুয়ো (fake) তৃণমূল নেতা (TMC Leader)! চাঞ্চল্যকর অভিযোগ দক্ষিণ দিনাজপুরে (South Dinajpur)! জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিতর্কিত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের দাবি তিনি নির্দোষ।


ভুয়ো নেতা!


ভুয়ো IAS, IPS, ভুয়ো CBI, ভুয়ো চিকিৎসকের পর এবার গ্রেফতার এক ‘ভুয়ো’ তৃণমূল নেতা! ভরা সভায় ভাষণ দিলেন! নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে দাবিও করলেন! সেই ব্যক্তিই আবার গ্রেফতার হলেন তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে। চাঞ্চল্য দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে। 


বিতর্কের কেন্দ্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিও। যদিও সেই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। সেখানে ‘ভুয়ো’ তৃণমূল নেতা স্বপন মুখোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, 'বিগত ৩২ বছর আমার সৌভাগ্য হয়েছে আজকের মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের জননেত্রীর সঙ্গে থাকার। উনি যতবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, প্রতিবারই আমি ওঁর সঙ্গে দিল্লিতে ছিলাম। দুবার রেলমন্ত্রী, একবার কয়লামন্ত্রী, রাজীব গাঁধীর আমলে যুব কল্যাণ মন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রী, সব ব্য়াপারেই ছিলাম। পরবর্তীকালে আপনাদের সকলের নয়নের মণি আমাদের যুব সমাজের আইকন অভিষেকবাবু, তার সঙ্গেও সমান ভাবে জড়িয়ে আছি।'

এরপর দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বসাক বলেন, 'যে ভদ্রলোক এসেছিলেন, তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, সেই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা। কখনও বলেছেন কলকাতার লিডার। কখনও বলেছেন যুব সাধারণ সম্পাদক রাজ্য স্তরের। কলকাতায় বার্তা পাঠিয়ে আমরা দেখেছি সেই ভদ্রলোক দলের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন।'


জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার তপনের রবীন্দ্রভবনে দলীয় সভা হয়। একই সময়ে কয়েকশো মিটার দূরে হয় আরেকটি সভা। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ওই সভাতেই বক্তব্য রাখেন স্বপন মুখোপাধ্যায় নামে এক ভুয়ো তৃণমূল নেতা। 


ভাইরাল ভিডিওয় ওই ‘ভুয়ো’ তৃণমূল নেতাকে বলতে শোনা যায়, 'নেতৃত্বের স্পষ্ট নির্দেশ, আগামী দিনে আপনাদের সবার প্রিয় প্রশান্ত মিত্র শুধু একটা পুরসভার সামান্য পুরপ্রধান হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। আগামী দিনে এই জেলার (দক্ষিণ দিনাজপুর) নেতৃত্বভার যিনি গ্রহণ করবেন, এই জেলাকে নেতৃত্ব দেবেন আপনাদের সঙ্গে নিয়ে, তাঁর নাম আর কেউ নয়, তিনি প্রশান্ত মিত্র। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে গেলাম কারণ আলোচনা যেখানে হয় সেখানে আমিও ছিলাম।'


উজ্জ্বল বসাকের পাল্টা মন্তব্য, 'রাজ্য থেকে কোনও পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়নি। কোনও রকম ভাবে দলীয় কাউকে পাঠানো হয়নি। কলকাতা থেকে দল জানিয়ে দিয়েছে। তিনি অবৈধ কথা, অসত্য কথা বলেছেন। তাঁর ওই অসত্য কথার জন্য দলীয় কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। আমরা অভিযোগ করেছি পুলিশে। FIR করেছি।'


তৃণমূল নেতৃত্বের FIR-এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত স্বপন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, 'আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ। ঈশ্বর আছেন।' তাঁকে যখন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, 'আপনি কি তৃণমূলের কর্মী?' তাঁর উত্তর, 'একনিষ্ঠ কর্মী। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।'


আরও পড়ুন: Malda: অচেনা নম্বর থেকে ভিডিও কল রিসিভ করে ব্ল্যাকমেলের শিকার মালদার তৃণমূল নেতা


গোটা ঘটনায় শুরু রাজনৈতিক তরজা


ভরা সভায় ‘ভুয়ো’ তৃণমূল নেতা! অভিযোগ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের। গোটা ঘটনায় কটাক্ষ বিজেপির। দক্ষিণ দিনাজপুরের বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, ' তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত। কে ভুয়ো নেতা তাই বোঝা যাচ্ছে না। এরা আবার মানুষের মঙ্গল করবে।'


ধৃতের ৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বালুরঘাট সিজেএম আদালত।