রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান : ফের পূর্ব বর্ধমানে ভোটার তালিকায় অদ্ভূতুড়ে কাণ্ড। কেতুগ্রামে ভোটার তালিকায় জামাইয়ের বাবা আর নাতির বাবা একই ব্যক্তি। বাংলাদেশে কালাচাঁদ মণ্ডল ও দুলাল মণ্ডল সম্পর্কে শ্বশুর-জামাই। কিন্তু, এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় তাঁরা বাবা-ছেলে। বাংলাদেশে কালাচাঁদ মণ্ডল ও দুর্জয় মণ্ডলের সম্পর্ক দাদু-নাতির। কেতুগ্রামের ভোটার তালিকায় তাঁরা বাবা-ছেলে। সম্পর্কের গরমিলে আধার কার্ড, রেশন কার্ডও বানানো হয়েছে। এই ঘটনায় কালাচাঁদ বাবু অদ্ভুত যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, 'জামাই তো বাবা বলতেই পারে শ্বশুরকে। তাতে তো সমস্যা নেই। কিন্তু নাতি বাবা বলতে পারে না।' 

এই পুরো বিষয়ে একটা বড় প্রশ্ন হল, প্রশাসন কীভাবে এমন ভুল করল? একটা ভোটার তালিকা তৈরি করতে গেলে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির যাবতীয় নথি থাকে প্রশাসনের কাছে। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড তৈরি করতে হলে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রশাসনকে জমা দিতে হয়। তারপরেও এমন ভুল তাহলে কী করে হয়? তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত? উঠছে প্রশ্ন। কারণ নাহলে একই ব্যক্তি নিজের জামাইয়েরও বাবা এবং নাতিরও বাবা, এই অদ্ভুত সম্পর্কে কীভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারেন। 

ভোটার তালিকায় এই অদ্ভূতুড়ে কাণ্ড নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শাসক দলের দাবি, এসব করাচ্ছে বিজেপি। ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে, বাংলাদেশ থেকে ভোটার এনে, এখানকার ভোটে প্রভাব ফেলতে চাইছে বিজেপি। অন্যদিকে বিজেপির দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। উল্টে বিরোধী পক্ষ বলছে হালে পানি না পেয়ে তৃণমূল ভুলভাব তথ্য রটাচ্ছে। 

মোটা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা লোকেদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ভোটার কার্ড, এই অভিযোগ অনেকদিন ধরেই উঠছে।  বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে রাজ্য় রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, তখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে সামনে এসেছে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ। আর সেই অভিযোগে জড়িয়েছে তৃণমূলের নাম। যদিও, তৃণমূল নেতারা সেই অভিযোগ খারিজের চেষ্টা করেছেন। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ বলছেন, 'বাংলাদেশ থেকে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে এখানে চক্রান্ত করতে চাইছে। আমরা দেখছি, সতর্ক রয়েছি। প্রশাসনকে বলব খেয়াল রাখতে। কালাচাঁদ মণ্ডল বিজেপি সমর্থক।' অন্যদিকে বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সীমা ভট্টাচার্য বলছেন, 'বিজেপি তো ক্ষমতায় ছিল না। বিজেপি তো ভোটার তালিকা তৈরি করেনি। তৃণমূল দেখলে পালে হাওয়া নেই, মানুষ তাদের সঙ্গে নেই, এখন কিছু তো বলতে হবে, তাই এসব বলছে।' 

২৬- এর বিধানসভার আগে বারবার ভোটার তালিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যেদিন বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদে পথে নামলেন, সেদিনই অনুপ্রবেশ-ইস্য়ুতে রাজ্য়ের মুখ্য় নির্বাচনী অফিসারের দফতরে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী। তথ্য় পরিসংখ্য়ান পেশ করে অভিযোগ করলেন, অনুপ্রবেশের ফলে পাল্টে যাচ্ছে রাজ্য়ের জনবিন্য়াস। পাল্টা ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বুধবার মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যখন হাতিয়ার করলেন বাঙালি আবেগকে, তখন ফের একবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে সরানোর জোরাল দাবি জানালেন শুভেনদু অধিকারী। আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। অভিযোগ করলেন, অনুপ্রবেশের ফলে পাল্টে যাচ্ছে রাজ্য়ের জনবিন্য়াস।