অর্ণব মুখোপাধ্য়ায় ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী: শোভন চট্টোপাধ্য়ায় তৃণমূলে ফিরবেন কি না, সেই জল্পনার মধ্য়েই এবার একদা সতীর্থকে নিয়ে মুখ খুললেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, "শোভন নিজের পরিবারে ফিরে আসুক। নিজের বাচ্চাগুলোর কাছে ফিরে আসুক। এই বয়সে এইসব ভাল লাগে?" তাঁর এই মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শোভন নিজেও সেই নিয়ে মুখ খুলেছেন। (Firhad on Suvendu)
শোভন তৃণমূলে ফিরছেন বলে সম্প্রতিই খবর ছড়ায়। সেই নিয়ে জল্পনা বাড়িয়ে তোলেন শোভন নিজেই। এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে জানান, রাজনৈতিক জীবনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নির্দেশ এবং উপদেশ মেনেই গ্রহণ করেন। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে জোড়াফুলে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন শোভন। ২১ জুলাই তাঁরা কাছে যন্ত্রণা, পাশাপাশি আবেগের দিন বলে জানান। পরিস্থিতি, পরিবেশ অনুযায়ী আবারও ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে পৌঁছে যাবেন বলে জানান। (Sovan Chatterjee)
এর পরই তৃণমূলে শোভনের প্রত্যাবর্তন সময়ের অপেক্ষা বলে জল্পনা শুরু হয়। সেই আবহেই শোভনকে নিয়ে মুখ খোলেন ফিরহাদ। প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে বলেন, "শোভন সব জায়গায় ফিরে আসুন। আমাদের এখানে ফিরে আসুন, নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসুন, নিজের বাচ্চাগুলোর কাছে ফিরে আসুন। আমরা রাজনীতি করি, পাবলিক লাইফে আছি। আমাদের কাছে এই বয়সে এইসব ভাল লাগে? আমরা চাই শোভন নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসুন। বাচ্চাগুলো বাবার জন্য আকুল হয়ে থাকে, বাচ্চাগুলোর কাছে ফিরুন, তৃণমূলে ফিরুন।" (Firhad Hakim)
আরও পড়ুন: Madan Mitra: 'গুলি করলে কে বাঁচাবে'? সৌগতর পর এবার হুমকি ফোন পেলেন মদন
ফিরহাদ আরও বলেন, "আমি শোভনের বাচ্চাদের কোলে-পিঠে নিয়েছি। ওঁদের বাড়ি গেলে ছেলেমেয়েগুলো কোলে এসে বসত। আমার মেয়েরা, ওঁর বাচ্চারা, প্রায় এক, ওরা একটু ছোট। কিন্তু প্রায় একই সময় বড় হয়েছে। ওদের দেখলে আমার কষ্ট হয়, বাবা হিসেবে। বাবার আদর থেকে বঞ্চিত ওরা। আসুন, ফিরে আসুন। তৃণমূলে আসুন, পরিবারের কাছে আসুন, বাচ্চাগুলোর কাছে আসুন।"
শোভনকে নিয়ে ফিরহাদের এই মন্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া হতে সময় লাগেনি। এর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, ফিরহাদকে সরিয়ে কলকাতার মেয়রের পদে শোভনকে বসাতে চাইছেন মমতা। তাই শোভনকে নিয়ে ফিরহাদের মন্তব্যে খোঁচা অনুভব করেন কেউ কেউ। সেই নিয়ে মুখ খুলেছেন শোভনও। তাঁর বক্তব্য, "ববিদা কৌশলী পদক্ষেপ করছেন। গত সাত বছরে তো জিজ্ঞেস করেননি! আজ হঠাৎ ফেরার জল্পনা চলছে বলে বলে বেড়াচ্ছেন। রাজনীতির কথা উঠলেই ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলেন।"
শোভন নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসুন বলে যে মন্তব্য় করেছেন ফিরহাদ, সে প্রসঙ্গে শোভন বলেন, "দুর্ভাগ্যজনক। সাত বছর আগেই ববিদাকে বলেছিলাম, কেন ঘর ছাড়তে হয়েছিল আমাকে। তখন বলেছিলেন, উনি এর মধ্যে নেই। রাজনীতির আলোচনা এলেই আমার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবনে অনুপ্রবেশ করে এসব কথা বলেন ববিদা। বৈশাখীর কী অপরাধ? আমার পাশে দাঁড়ানোর পর কলেজের সভাপতি হওয়ার পর, বৈশাখীর চাকরি চলে গেল কেন? ববিদাকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, অথচ শুনতে হয়েছিল উখার কে ফেক দেঙ্গে। বৈশাখীর সম্পর্কে আমার এই অপরাধ বোধ, ওর মা মারা গিয়েছেন... কোর্টের ভিতর রত্না চিৎকার করছিল, ওঁকে আমি জবাব দিতে পারিনি।"
২০১৮ সালে তৃণমূল ছেড়েছিলেন শোভন। প্রায় একই সময়ে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন। বেহালার পৈতৃক ভিটে, স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্য়ায়, ছেলে-মেয়েকে ছেড়ে, এসে উঠেছিলেন গোলপার্কের বিশাল ফ্ল্য়াটে। সেই থেকে তাঁর সঙ্গী বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ২০১৮ সালে, মেয়ের ভিসা সংক্রান্ত নথিতে, শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের সইয়ের জন্য়, রাতভর এই ফ্ল্য়াটের বাইরে ধর্নায় বসতে দেখা গেছিল রত্নাকে। এখন শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের তৃণমূলে প্রত্য়াবর্তনের জল্পনা যখন জোরাল, শোভনকে তাঁর সন্তানদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।