সনৎ ঝা ও মোহন প্রসাদ, দার্জিলিং: ২০১১-র GTA (Gorkhaland Territorial Administration) চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (Gorkha Janmukti Morcha )। ফের পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব হল বিমল গুরুংয়ের (Bimal Gurung) দল। মোর্চাকে সমর্থন জানিয়েছে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি। অন্য দিকে, বিরোধিতা করেছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক পার্টি, যাকে ঘিরে ফের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির পথে পাহাড়ের রাজনীতি। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির পথে পাহাড়ের রাজনীতি!
শুক্রবার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, "২০১১-র ১৮ জুলাই যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তৈরির জন্য, সেখান থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা উইথড্র করছে।"
প্রায় এক যুগ পর, ২০১১-র GTA চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে বিমল গুরুংয়ের দল।
আর তার সঙ্গে সঙ্গেই আবার প্রশ্ন উঠে গেল, তাহলে কি ফের পৃথক রাজ্যের দাবিতে সুর চড়বে পাহাড়ে? পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আবার উত্তপ্ত হবে দার্জিলিং? কারণ, ইতিমধ্যেই GTA চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে সমর্থন জানিয়েছেন হামরো পার্টির সভাপতি ও GTA সদস্য অজয় এডওয়ার্ড।
অন্য দিকে, GTA-র বর্তমান চেয়ারম্যান ও ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক পার্টির অনিত থাপা আবার মোর্চার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। সব মিলিয়ে শীতের শেষে ফের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত মিলছে পাহাড়ে।
আরও পড়ুন: Indus Water Treaty: জল নিয়ে সুর নরম নয় আর, সিন্ধু-প্রশ্নে সটান পাকিস্তানকে নোটিস ধরাল ভারত
তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ২০১১-র ১৮ জুলাই, কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে GTA চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার পর প্রায় ১২ বছর কেটে গিছে। একইসঙ্গে GTA চুক্তি আইনে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি GTA নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক পার্টি। এই পরিস্থিতিতে এবার GTA চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। একইসঙ্গে উঠল আলাদা রাজ্য গঠনের দাবি।
গোর্খা জনমুক্তির সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, "GTA-কে আমরা আর সাপোর্ট করছি না। এবার ভারত সরকার ও রাজ্য সরকার দেখুক। জিটিএ আমাদের কিছুই দিতে পারেনি। তরাই ডুয়ার্সকে একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। বিজেপি বলেছে পাহাড়ে স্থায়ী সমাধান করা হবে। সেটা এখন ওদের দেখতে হবে। আমাদের দাবি পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য।"
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই ঘোষণার পরই কার্যত আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন হামরো পার্টির চেয়ারম্যান অজয় এডওয়ার্ড। তিনি বলেন, "আমিও তো জিটিএ মেম্বার। কোনও কাজ করা যায় না। আমরাও পদত্যাগ করব।"
অন্য দিকে, বিরোধিতা করেছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক পার্টি। অনীত বলেন, "এত অপরিণত জানা ছিল না। এখন চুক্তি আর নেই। এখন আইন হয়ে গেছে। মানুষ জনমত দিয়েছে। এখন আর প্রত্যাহার করার প্রশ্ন আসে না পাহাড়ের মানুষের স্বপ্ন...আগে উন্নয়ন জরুরি।"
আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহল
GTA চুক্তি মোর্চা বেরিয়ে আসায়, পাহাড়ে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে শিলিগুড়ির মেয়র তথা তৃণমূল সাংসদ গৌতম দেব বলেন, "রাজনীতিতে এ সব অপ্রাসঙ্গিক। কাকে চিঠি দিল গুরুত্বপূর্ণ নয়।" মোর্চা সূত্রে খবর, শীঘ্রই তারা বৈঠকে বসে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।