কলকাতা: শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) পৈতৃক বাড়ি নিয়ে টানাপোড়েন চলছেই। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখল করে রাখার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ (Visva Bharati)। আইনজীবীকে দিয়ে জবাব পাঠাবেন বলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ। এ বার ফের তাঁকে নিশানা করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chakraborty)। জমি নয়, সরাসরি নোবেল নিয়ে অমর্ত্যকে নিশানা করলেন তিনি। অমর্ত্য নোবেল পুরস্কার পাননি বলে  দাবি করলে বিদ্যুৎ। এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন অমর্ত্যও।


জমি নয়, সরাসরি নোবেল নিয়ে অমর্ত্যকে নিশানা করলেন বিদ্যুৎ


অমর্ত্যকে নিশানা করে বিদ্যুৎ বলেন, "কেউ যদি মনে করেন অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাহলে ভুল করবেন। অধ্যাপক সেন খুবই বড় মাপের মানুষ। কিন্তু যে অন্যায় করেছেন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো উচিত। আসুন, আলোচনায় বসে এই সমস্যার সমাধান করি, যাতে ভবিষ্যতে আপনাকে এবং বিশ্বভারতীকে সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।"


সংবাদমাধ্যমে বিদ্যুৎ আরও বলেন, "উনি নিজেকে নোবেল প্রাপক হিসেবে দাবি করেন বটে। কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি উনি। যে চুক্তি তৈরি হয়েছিল, তাতে পাঁচ জনকে নোবেল দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। ঠিক হয় নোবেল পাবেন পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, ঔষধবিদ, সাহিত্যিক এবং শান্তিবিদ। এর পর কেউ পাবেন না। পরবর্তী কালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এগিয়ে এসে বলে, পুরস্কারের টাকা তারা দেবে।  রবীন্দ্রনাথের নোবেলে দেখেছেন, চেহারাও খোদাই করা আছে। কিন্তু অর্থনীতিতে যাঁরা নোবেল পান, তাতে লেখা হয় অ্যালফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে দেওয়া হল পুরস্কার।" অর্থাৎ সেটিকে নোবেল পুরস্কার বলা যাবে না বলে মত বিদ্যুতের।


উপাচার্যের এমন মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া চাইলে, অমর্ত্য বলেন, "আমার কিছু বলার নেই। উনি যত ইচ্ছা দাবি করতে পারেন। উনি আমাকে কেন নিশানা করছেন! জানি না কার মাথায় কী ঘোরে। তিনি যদি বলেন, এই জায়গা আমাদের নয়, তাহলে আমিও তো বলতে পারি, এটা উপাচার্যের বাড়ি নয়, আমার ছোট মামা থাকতেন। যে কোনও বিষয়ে কথা বাড়াতে চাইলে, বাড়ানোই যায়। ওঁর সঙ্গে কেন লোকে আলোচনা করতে চান না, সেটা ওঁর চিন্তা করা দরকার একটু। এমন লোক যদি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আসেন, যিনি সত্য-মিথ্যার তফাত করতে পারেন না, তাহলে বিশ্ববিদ্যাল.গুলির অূস্থা কেন এত খারাপ, তা নিয়ে আমাদের আলোচনার অবকাশ খুব কম।"


আরও পড়ুন: Presidency University: গুজরাত-তথ্যচিত্র প্রদর্শনকে ঘিরে ঝামেলা প্রেসিডেন্সিতেও, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে


শান্তিনিকেতনে এই হল অমর্ত্যর পৈতৃক বাড়ি 'প্রতীচী'কে ঘিরেই বিতর্ক। সম্প্রতি তা নিয়ে অমর্ত্যকে নোটিসও পাঠায় বিশ্বভারতী। তাতে বলা হয়,  'অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে আছেন। এই জমি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিন।' 


বিশ্বভারতীর দাবি, ১৯৪৩ সালে অধ্যাপক অমর্ত্যের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়।
২০০৬ সালে অধ্যাপক অমর্ত্যের আবেদনের ভিত্তিতে, সেই ইজারার জমি তাঁর নামে হস্তান্তর করা হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, রেকর্ড এবং সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল (১.৯৬ কাঠা) জমি অমর্ত্যরর ইজারা পাওয়া জমির মধ্যে রয়ে গিয়েছে। যদিও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, বাড়ির জন্য ইজারার জমির বাইরেও কিছু জমি কিনেছিলেন তাঁরা। 


গোটা ঘটনায় অমর্ত্যর পাশে দাঁড়িয়েছেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাণর কথায়, "দুর্ভাগ্যের বিষয়। অমর্ত্য সেনের থাকা বাংলার গর্ব। অশিক্ষিত উপাচার্য। মোদির কথায় চলছেন।" তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, "বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কেন্দ্রের ধামাধরা লোক। জেনেশুনে বদমায়েশি করছেন। অমর্ত্য সেনেক অপমান করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন। এ ভাবা যায় না।"


নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, সেই অমর্ত্যর সঙ্গেই টানাপোড়েন বিশ্বভারতীর!


অমর্ত্য যথার্থ ভাবেই গোটা বিশ্বে সমাদৃত। বাংলার গর্বও বটে। তাঁর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে কবিগুরুর শান্তিনিকেতন। তাঁর নামও রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর সঙ্গেই এখন টানাপোড়েন চলছে বিশ্বভারতীর।