শান্তনু নস্কর, গোসাবা: কথায় আছে 'একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রিব দোসর'। গোসাবার যা সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাতে সেই কথাই মনে করাচ্ছে। প্রথমে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে গোসাবার নদী বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে ডুবে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেত-জমি। যার ক্ষত এখনও টাটকা। এদিকে এরই মধ্যে রাজ্যে অতিবৃষ্টিতে রাঙাবেলিয়া, গোসাবা অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।


এক নাগাড়ের বৃষ্টিতে ভেঙেছে নদীবাঁধও। ফলে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে পড়েছে ক্ষেত ও জমিতে। আগের জমা জল নামতে না নামতেই ফের এই ঘটনায় মাথায় হাত মৎস্যজীবী ও কৃষকদের। নোনা জল জমিতে জমার অর্থ সে জমি ধীরে ধীরে উর্বরতা হারায়, হয়ে পড়ে চাষাবাদের অযোগ্য। প্রথমে নিম্নচাপের ফলে অতিবৃষ্টি, এরপরে ক্রমাগত বৃষ্টির ফলে গোসাবা থানার রাঙাবেলিয়া,গোসাবা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বেশির ভাগ জায়গা এখনও জলমগ্ন। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী ও মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল। আর এই বৃষ্টির ফলে কৃষক মৎস্যজীবীদের মাথায় হাত।


পুকুর,খাল,বিল,মাছের ভেড়ি থেকে চাষের জমি সমস্ত মিষ্টি জলের এলাকা বন্যায় ভেসে গিয়েছে ভয়ঙ্করভাবে। ক্ষতি হয়েছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। পুকুর, ঘাট থেকে শুরু করে মাছের ভেড়িতে ঢুকেছে নোনা জল। এর ফলে একদিকে যেমন সবজি ক্ষেত জলে ডুবে সবজি পচে গিয়ে নষ্ট হয়েছে, তেমনি ধান চাষের জন্য যে বীজ তোলা ছিল সেগুলিরও বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।


জলমগ্ন পুকুরে কোথাও কোথাও ভেসে গিয়েছে মাছ। কোথাও আবার নোনা জলে মরে গিয়েছে মিষ্টি জলের মাছ। গোসাবার রাঙাবেলিয়া,গোসাবা,কচুখালী-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের এখন মাথায় হাত। চাষ ও মাছের উপর নির্ভর করেই কোন রকমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে চলে এই সকল পরিবার। কিন্তু এই বন্যায় ক্ষতির প্রকোপ কাটিয়ে আগামী দিনে কীভাবে জীবন-জীবিকা চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে এই এলাকার বাসিন্দারা। 


বর্তমানে সরকারি সাহায্যর উপরই নির্ভরশীল রয়েছে বাসিন্দারা। এদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে জল জমে থাকায় কিছু মানুষ এখনো পর্যন্ত আটক। তাঁদের বর্তমান ঠিকানা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। এই আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষজনের অভিযোগ প্রথম কয়েকদিন সরকারিভাবে খাওয়ারের ব্যবস্থা করা হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদেরকে সরকারি ভাবে কোন সাহায্য করা হচ্ছে না, এমনটাই অভিযোগ। 


যদিও গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র জানান প্রথম চারদিন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে তুলে নিয়ে গিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারপরে জল অনেকটা নেমে যাওয়ায় মানুষজন বাড়ি ফিরে গিয়েছে।তবে আগামী দিনে সরকারি যতটুকু সাহায্য পাওয়া যাবে তাঁদেরকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, "আমার জানা নেই এখনও পর্যন্ত কারা আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি কোন মানুষ থেকে থাকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার সমাধান করবো।"