শান্তনু নস্কর, গোসাবা: মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে সুন্দরবনের (sundarban) প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিহারে নাচের কাজে নিয়ে যাওয়ার নাম করে নারী পাচারের (Women Trafficking) চক্রান্ত চলছিল। ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে এক মহিলাসহ চারজনকে। নারী পাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে আর কার কার যোগ রয়েছে, তা জানতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আমতলির বাসিন্দা জয়ন্ত মন্ডলের স্ত্রী রাখি মন্ডলকে বিহারে নাচের কাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে থাকে রাকেশ তিওয়ারি নামে এক ব্যক্তি। বিনিময়ে মোটা টাকা দেওয়ার প্রলোভনও দেয় সে। লকডাউনের বাজারে একসঙ্গে এতগুলো টাকা পাওয়ার প্রস্তাব পেয়েও স্ত্রীকে ভিন রাজ্যে পাঠাতে চাননি জয়ন্ত মন্ডল। তবে শুধু রাখি মন্ডলকেই নয়, আশেপাশের এলাকা থেকেও আরও বেশ কয়েকজন মহিলাকেও বিহারে নাচের কাজে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল রাকেশ। জানা যাচ্ছে এমনটাই। এখানেই সন্দেহ হয় জয়ন্ত বাবুর। তিনি গোটা বিষয়টা জানান সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশকে। নারী পাচারের ঘটনার আঁচ পেয়ে সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে রাকেশ তিওয়ারিকে। কিন্তু তার কথায় বিস্তর অসঙ্গতি পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ আটক করে তাকে। পাশাপাশি ধৃত রাকেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তার দলবলের কথাও জানতে পেরেছে। রত্না সরকার, পবন কুমার গুপ্তা ও আরজিত কুমার মাঞ্জি নামে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় ওসি সুমন দাস জানিয়েছেন যে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করায় তাদের কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। কেউই সঠিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি। ফলে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - লক্ষ লক্ষ টাকার চোরাই কাঠ! কীভাবে জঙ্গলে ঢুকছে চোরাশিকারিরা? বন-সুরক্ষায় প্রশ্নে পরিকাঠামো
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই নারী পাচার চক্রের মূল রাকেশ তিওয়ারি। রত্না সরকার নামে ধৃত ওই মহিলাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তারা এলাকাতেই বসবাস করছিল। রত্নাকে ব্যবহার করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত কিশোরী ও তরুণীদের বিহারে নিয়ে গিয়ে অসৎ কাজে ব্যবহার করত সে। ধৃত অন্য দুজন তাদের গাড়ির চালক। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত সুন্দরবন এলাকা থেকে আরও সাত-আটজন মহিলাকে বিহারে নিয়ে গিয়েছে। এই এলাকা থেকেই আরও মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
সূত্রের খবর, ধৃত অভিযুক্তদের মধ্যে রত্না সরকারের বাড়ি হাসনাবাদ থানার রূপমারি গ্রামে। বাকিরা বিহারের সিয়ান জেলার জালালপুর এলাকার বাসিন্দা। নারী পাচারের চক্র চালাতেই তারা এই এলাকায় থাকছিল। প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের তারা মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নাচের কাজের নাম করে বিহারে নিয়ে যায়। এবং সেখানে অসৎ কাজে লাগায় বলেও জানা গিয়েছে।