মোহন প্রসাদ, দার্জিলিং: গরমে সমতলের সবাই ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন দার্জিলিং পাহাড়ে। এখন পাহাড়ের আবহাওয়ার বেশ ঠান্ডা। বৃষ্টিও হচ্ছে, কিন্তু পাহাড়ের রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। সৌজন্যে জিটিএ নির্বাচন। আর কদিন পরেই ২৬ জুন পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন হতে চলেছে। তার আগে প্রচারে এবং বাক্যবিনিময়ে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
সামনে জিটিএ নির্বাচন, তার আগে তেতে উঠেছে প্রতীক-তরজা। নির্বাচনে রুটি প্রতীক পেয়েছে অজয় এডওয়ার্ডের (Ajay Edward) হামরো পার্টি (Hamro Party)। প্রতীক নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষও করেছেন অজয়। যদিও তাঁর মূল নিশানা জিএনএলএফ (GNLF) নেতা এবং বিজেপি (BJP) বিধায়ক নীরজ জিম্বা। তিনি জানান, বিরোধীরা, বিশেষ করে নীরজ জিম্বা তাঁকে 'রুটিওয়ালা' বলতেন। তিনি ভাগ্যক্রমে সেটাই প্রতীক পেয়েছেন। নীরজ জিম্বা তাঁর প্রচার করে দিয়েছেন বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তিনি। অজয় এডওয়ার্ড পাহাড়ের অত্যন্ত পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি রেস্তরাঁর কর্ণধার। সেটাই তাঁর পারিবারিক ব্য়বসা। পাউরুটি, কেকের জন্যও ওই রেস্তরাঁর সুনাম রয়েছে।
নীরজের যুক্তি:
দার্জিলিংয়ের বিজেপি বিধায়ক এবং জিএনএলএফ-এর সেক্রেটারি জেনারেল নীরজ জিম্বা বলেন, 'উনি আগের তিনপুরুষ ধরেই রুটিওয়ালা। তাঁর ঠাকুর্দা, তাঁর বাবা সবাই রুটিওয়ালা ছিলেন। ২০০৭ সালে বিমল গুরুঙ্গ অজয় এডওয়ার্ডকে ওই নামেই ডাকতেন। মদন তামাঙ্গও ওই নামে ডেকেছেন।' নীরজের দাবি তিনি শুধু পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, জিটিএ নির্বাচনে কখনই জিততে পারবেন না অজয়।
কী বলছেন অনীত?
এই নিয়ে অবশ্য নরম সুর একদা বিমল-বিনয়ের সহযোগী, অধুনা ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতা অনীত থাপার মুখে। তিনি বলেন, 'রুটিই অজয়ের ব্যবসা। তাই হয়তো এই চিহ্ন তাঁর জন্য ভাল। তবে এবার পাহাড়ে শুধুমাত্র মোমবাতিই জ্বলবে।' জিটিএ নির্বাচনে অনীতের দলের প্রতীক মোমবাতি।
পুরসভা নির্বাচনে চমক:
এবারের জিটিএ নির্বাচন বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত পাহাড়ে শেষ কথা ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। আরও ভাল করে বললে বিমল গুরুং। সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ-এর পরে পাহাড়ের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেছিলেন বিমল। তারপরে তিস্তা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। এখন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রায় নড়বড়ে। বিমল, জিএনএলএফ-এর হাত ধরে সাংসদ-বিধায়ক পদ দখল করলেও নিজের সংগঠন সেভাবে কিছু গোছাতে পারেনি বিজেপি। বরং সম্প্রতি হয়ে যাওয়া দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যকে চমক দিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এসেছে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি। তার কদিন আগেই এই দল গড়ছিলেন অজয়। বিভিন্ন কারণে আগের দল জিএনএলএফ-এরব সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল অজয় এডওয়ার্ডের। সূত্রের খবর, পদ বা টিকিট সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে মন ঘিসিংয়ের দূরত্ব তৈরি হয় বহু পুরনো এই জিএনএলএফ নেতার। সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল দলেরই আরেক নেতা নীরজ জিম্বার সঙ্গেও। তারপরেই হামরো পার্টি গঠন করে দার্জিলিং পুরসভা জিতে নেন অজয়।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে সোনা জয় বাংলার