ময়নাগুড়ি: সন্ধে নামার মুখে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ময়নাগুডি়র (Maynaguri) দোমহনিতে। সেখানে লাইনচ্যূত পটনা-বিকানের এক্সপ্রেস (Bikaner-Guwahati Express)। সন্ধে ৬টা পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গিয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় কমপক্ষে ১২ জন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁদের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে রেল। যদিও রেলের ডিআরএম-এর দাবি, করোনার কারণে ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা তত বেশি ছিল না।


বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ পটনা-গুয়াহাটি বিকানের ১৫৩৬৬ এক্সপ্রেসটি লাইনচ্যূত হয়। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। কিন্তু দুর্ঘটনার তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ইঞ্জিনের পর থেকে ১২টি কামরা লাইনচ্যূত হয়ে যায়। একটি কামরার উপর উঠে যায় আর একটি কামরা। একাধিক কামরা লাইনচ্যূত হয়ে যায়। এমনকি একটি কামরা জলেও গিয়ে পড়ে। ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রেনে ৭০০-র বেশি যাত্রী ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।


যদিও আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম (Divisional Railway Manager/DRM) দিলীপ কুমার সিংহ জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা কম ছিল। ফলে হতাহতের সংখ্যা মারাত্মক জায়গায় পৌঁছবে না বলে আশাবাদী তিনি। এ দিন দুর্ঘটনার খবর আসতেই ফোনে ডিআরএম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবিপি আনন্দ। দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কী কারণে দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখছে রেল। ট্রেনের একটি কামরা উল্টে গিয়েছে। আরও চারটি কামরা লাইনচ্যূত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি আমি। উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে মোট হতাহতের সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। আমাদের দল পৌঁছে গিয়েছে।’’


আরও পড়ুন: Bikaner Express Derailed: উল্টে গেল বিকানের এক্সপ্রেসের ৪টি কামরা, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু উদ্ধারকাজ


কিন্তু এর পর জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘’১০ থেকে ১২টি কামরা লাইনচ্যূত হয়েছে। ৩ জন মারা গিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি আমরা। এর মধ্যে দু’টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ভিতরে রয়েছেন অনেকে। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে টিম আসছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৯-১০ জনকে।’’


দুর্ঘটনার পর জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল এবং আশেপাশের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মোট ৫১টি অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছয় দুর্ঘটনাস্থলে। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে ট্রেনের কামরা, যাতে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করা যায়। কিন্তু সন্ধের মুখে দুর্ঘটনার পর অন্ধকার নেমে আসায়, সেখানে উদ্ধারকার্য কী ভাবে চালানো হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও মৌমিতা জানান, জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে উদ্ধারকার্য চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ক্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে।


জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর আহতদের ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা উঠলেও, সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায়, জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে সমস্ত ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে আশেপাশের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এবং নার্স এসে পৌঁছচ্ছেন জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে।