কলকাতা: প্রাথমিকে ৩৬ হাজার অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ঘোষণা কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। ৩ মাসের মধ্যে প্রাথমিকে নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) । 'সরকার চাইলে মানিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া', প্রশিক্ষিতদের চাকরি বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর এবার এনিয়ে মুখ খুললেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রতিক্রিয়া জানালেন আন্দোলনকারীদের দলও।


 'ঐতিহাসিক রায়, বিচারপতিকে ধন্যবাদ'


এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, এরকম একটা ঐতিহাসিক রায় এবং ঐতিহাসিক ঘটনা, এটাতো কল্পনাও করা যায় না। মহামান্য বিচারপতি আগেই বলছিলেন, বারবার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। কারণ এই ধরণের তথ্য তাঁর কাছে ছিল। কল্পনা করা যায় ?  অনৈতিকতার উপরে দাঁড়িয়ে ছিল পুরো ব্যবস্থাটা। সিস্টেমকে না মেনে, হাজার হাজার লোককে অনৈতিকভাবে চাকরিতে ঢোকানো হয়েছে...এটা বোঝা যাচ্ছে যে, কত বড় একটা দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি দূরীকরণ খুব সাহসের সঙ্গে বিচারপতি করেছেন, তাঁকে ধন্যবাদ, প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। পাশাপাশি, এদিন বর্ষীয়ান বামনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'এই চাকরি খারিজের দায় পুরোপুরি রাজ্য সরকারের। তারা বেআইনি নিয়োগের বন্দোবস্ত করেছেন টাকার বিনিময়ে।' তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'এই রায় আমরা মানছি না। সংশ্লিষ্ট দফতর, সংশ্লিষ্ট বিভাগ যারা রয়েছেন তাঁরা আদালতেই এই রায়ের বিরুদ্ধে যা যা করা হবে জানিয়ে দিচ্ছেন।'


'আশার আলো' দেখছেন আন্দোলনকারীরাও


সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই যে, এযাবৎকালে কলকাতা হাইকোর্টে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে যে যোগ্য বঞ্চিতরা ২৬৩ দিন ধরে চাকরি দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন, তাঁদের তরফে এদিন একজন চাকরি প্রার্থী আন্দোলনকারী, এবিপির প্রতিনিধিকে জানালেন মনের কথা। তিনি বলেন,' অবশ্যই আমরা বলব যে, আমরা এতদিন মিডিয়ার মাধ্যমে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে, যে সমস্ত তথ্যগুলি আমরা তুলে ধরেছিলাম, সেখানে কেউ আমাদের গুরুত্ব দেয়নি। আমাদের কেউ বিশ্বাসও করতে চায়নি। আজকে মহামান্য আদালতের মাধ্যমে যে রায়টা হল, সেখানে দেশবাসী আগে থেকেই জানতো , মিডিয়ার মাধ্য়মে জানতো, আজকে রায় পেয়ে গেল যে, ৪২ হাজার ৫০০ নিয়োগ হয়েছে, সেখানে কত দুর্নীতি হয়েছে। আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি , জনসাধারণকে বোঝাতে পারিনি, কিন্তু এখন বুঝেছে।.. এই রায়ে অবশ্যই আমাদের একটা আশার আলো এসেছে।'


২০১৬ সালে  কত নিয়োগ করা হয়েছিল ? কতজন ছিলেন অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক ?


প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে যে টেট পরীক্ষা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে প্রাথমিকে সাড়ে ৪২ হাজার পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৩৬ হাজার জনই ছিলেন সেই মুহূর্তে অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক। ২০১৬-য় নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়নি, এই অভিযোগে মামলা করেছিলেন ১৪০ জন পরীক্ষার্থী। নিয়োগের প্রাক্কালে কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্ট না নেওয়া, সংরক্ষণ নীতি না মানার মতো অভিযোগও উঠেছিল। সেই নিয়ে দীর্ঘ শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কী রায় দেন, সেদিকেই নজর ছিল সকলের।


 আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?


আরও পড়ুন, গরমে কোন সরবতগুলি না খেলেই নয় ? কোনগুলি খুবই স্বাস্থ্যকর ? 


বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রায়ে একসঙ্গে ৩৬ হাজার অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের চাকরি বাতিল করারই নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও প্রশিক্ষিতদের চাকরি থাকছে। পাশাপাশি ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ পাওয়ার সময় যারা অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের স্কুলে ঢোকা আগামীকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। তাঁরা হাতে সময় পাবেন চার মাস। মাঝের চার মাসে অবশ্য পূর্ণ শিক্ষকের মতো নয় পার্শ্ব শিক্ষকের হারে বেতন পাবেন তাঁরা।