ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : বাংলাদেশের মোনা রানি দাস। খুলনা জেলার সাতক্ষীরায় বাড়ি। বয়স বছর ৫৪। বছর দুই আগে হঠাৎ বুকে ব্যথা, ডানদিকে। ডানদিকে ব্যথার বলে কেউই ভাবেননি এই ব্যথা হার্টের সমস্যার জন্য হতে পারে। বরং অ্যাসিডিটির সমস্যা ভেবেই ওষুধপত্র দেওয়া হয়। তবে বুকে ব্যথার সঙ্গে শুরু হল শ্বাসকষ্টও । তারপরে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন মোনা রানি। প্রায় ১৮ মাস ধরে বাংলাদেশে নানা পরীক্ষা হয়। তখনই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ। তাঁর হৃদপিণ্ড তো বুকের ডান পাশে ! যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় Dextrocardia ! মোনার বাড়ির লোকজন খবর দেন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা মেয়ে-জামাইকে। তাঁরাই ভারতে নিয়ে এসে চিকিৎসা শুরু করান তাঁর।
প্রাথমিকভাবে তাঁকে দেখানো হয়, কল্যাণীর একজন চিকিৎসককে। তিনিই পরামর্শ দেন মোনারানীকে নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার জন্য। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তিনি গুরুতর করোনারি আর্টারির অসুখে আক্রান্ত। তারপর আসা কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে তিনি ভর্তি হন গত ২৪ তারিখে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বের হয় আরও একটি অদ্ভুত সত্যি !
দেখা যায়, শুধু হার্ট নয়, তাঁর যকৃত, প্লীহা, ফুসফুস এবং পাকস্থলীও যেদিকে থাকার কথা তার উল্টোদিকে। অর্থাৎ তিনি শুধু ডেক্সট্রোকার্ডিয়াই ছিল না, তাঁর সিটাস ইনভারসাসও ছিল। অর্থাৎ তাঁর দেহের প্রধান অঙ্গগুলি, স্বাভাবিকভাবে যেদিকে থাকার কথা , ঠিক তার উল্টো দিকে ছিল। এটাই ছিল ডাক্তারদের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ বেশির ভাগ ডাক্তারই ডান-হাতি। তাঁদের কাজের ধরণটাও এক ধরনের । হঠাৎ দিক বদল গেলে কাজ করতে চূড়ান্ত অসুবিধে হয়। চিকিৎসক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রোগীর একটি গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল যা প্রাথমিকভাবে বুকের ডান দিকে হয়েছিল বলে, উপসর্গ দেখে বোঝা যায়নি।
চিকিৎসক জানান, ডাক্তাররা তাঁদের সুবিধাজনক বৃত্তের বাইরে গিয়ে উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে অপারেশনটি করেন। এমনকী বেশ কিছু পরীক্ষা করার সময়ও আয়না জাতীয় জিনিস লাগিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন অবসার্ভেশনে রেখেই ছেড়ে দেওয়া হবে তাঁকে।
এই অস্ত্রোপচার করে কলকাতা আরও একবার নজির গড়ল বিরল অস্ত্রোপচারে। বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের এইরকম ঘটনা দেখা যায়। এই মহিলার ক্ষেত্রে শুধু তাই নয় আরও একটি সমস্যা ছিল। সিটাস ইনভারসাস (SITUS INVERSUS)। প্রতি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে (Manipal Hospital Broadway )গত বুধবার রাতে এই অস্ত্রোপচার হয়েছে। কঠিন অস্ত্রোপচার শেষে খুশি চিকিৎসকরা। অ্যানাসথেসিয়ার প্রভাব কাটিয়ে ৩ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে রোগিণীর। তাঁর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে এবং তিনি সুস্থ আছেন বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: West Bengal Monsoon Update: পালাবে গরম! দেশে ঢুকল বর্ষা, বাংলা বৃষ্টি পাচ্ছে কবে?