সুজিত মণ্ডল, নদিয়া : হাতা-খুন্তির সঙ্গে পেন-খাতা। সংসারের হাল টানার সঙ্গে পরীক্ষার জটিল সমীকরণের সমাধান। আর্থিক অনটনে আটকে গিয়েছিল ইচ্ছা। কিন্তু দাঁতে-দাঁত চাপা জেদ ও অদম্য উৎসাহে কার্যত অসাধ্যসাধন। সুযোগ কাজে লাগিয়ে শেষপর্যন্ত বসেছিলেন পরীক্ষায়। ছেলের সঙ্গে। আর ছেলের মতোই উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary 2023) ভাল ফল করে পাশও করলেন মা।


উচ্চমাধ্যমিকের সফল কৃতীদের ভিড়ে আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছেন বছর আটত্রিশের লতিকা মণ্ডল। ছেলে সৌরভ মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর মাও বসেছিলেন এবারের পরীক্ষায়। সফলভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দু'জনেই। পরীক্ষায় পাশ করে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণ করতে পারলেও মা লতিকার মন অবশ্য কিছুটা খারাপ। ছেলের থেকে মোট নম্বরের ভিত্তিতে ৪০ নম্বর বেশি পেয়েছেন মা। তাই ফল বেরোনোর পর মায়ের কথায়, 'ফলটা উল্টো হলে খুশি হতাম।' আর মাকে বরাবর উৎসাহ দেওয়া ছেলে সৌরভের কথায়, 'হেরেও আমিই জিতেছি।'


নদিয়ার (Nadia) শান্তিপুরের নতুন সর্দারপাড়ার বাসিন্দা লতিকা মণ্ডল। ধুবুলিয়ার বাসিন্দা লতিকার সঙ্গে শান্তিপুরের নৃসিংহপুরের অসীম মণ্ডলের বিয়ে হয় প্রায় ২০ বছর আগে। বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অনটনের মধ্যে লতিকার পড়াশোনা আর বেশি দূর হয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তে পড়তেইস্কুলছুট হতে হয়েছিল। কিছু দিন পর বিয়ে এবং সংসার। স্বামী দিনমজুর। অনটনের সংসার।


কিন্তু সংসার সামলে ছেলে-মেয়েকে বড় করার মধ্যেও লতিকাকে বার বার টানত বই। তাঁর ইচ্ছে শুনে প্রথমে রাস্তা বাতলে গিয়েছিলেন এক প্রতিবেশী। মাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন ছেলে। এর পর আর দেরি না করে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যান লতিকা। ২০২০ সালে মাধ্যমিক দেন। ফলও হয়েছিল ভালই। তত দিনে মেয়ে স্কুলের গণ্ডি পার করে কলেজের পথে। ছেলে তার পরের বছরই পাশ করেছে মাধ্যমিক। 


২০২১ সালে নৃসিংহপুর হাই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হন লতিকা। আর ছেলে সৌরভ ভর্তি হন পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহারাজা হাই স্কুলে। এবার একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন মা এবং ছেলে। যেখানে মা পেয়েছেন ৩২৪, আর ছেলের ২৮৪ নম্বর।


আরও পড়ুন- 'বাবা-মাকে ছেড়ে অন্য শহরে পড়তে যেতে ভরসা পাব না', অকপট উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম স্থানাধিকারী সৃজা


নদিয়ার শান্তিপুরের এই দুই পরীক্ষার্থীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী।           


   


আরও পড়ুন: প্রচণ্ড গরম থেকে শরীরকে বাঁচাতে পাতে রাখুন এই খাবারগুলি