কলকাতা: তখন সন্ধে হয়ে গিয়েছে, ক্লান্তি ভিড় করেছে বাচ্চা মেয়েটার চোখে-মুখে। ঢুলু ঢুলু চোখ, অবিন্যস্ত চুল। 'কত ঘণ্টা পড়েছ?' 'বড় হয়ে কী হতে চাও'-এর মতো এক ঘেয়ে প্রশ্নে প্রায় ওষ্ঠাগত প্রাণ। বুধবার দিনভর শিরোনামেই ছিল উচ্চমাধ্যমিকের অন্যতম কৃতী ছাত্রী সৃজা উপাধ্যায়। তাঁকে নিয়ে কার্যত হইচই চলল সারাদিন, চলল কৃতীত্বের উদযাপনও। কিন্তু আজকের দিনটা কেমন কাটল সৃজার?


সারাদিনের ধকল সামলে অন ক্যামেরায় না হলেও, অফ ক্যামেরায় বেজার মুখে সৃজা বলেই ফেলল 'আর ভাললাগছে না'। দিনভর সংবাদ মাধ্যমে বাইট দিতে দিতে সে তখন ক্লান্ত। আজকের কী প্ল্যান জিজ্ঞেস করায় কাচুমাচু মুখে সৃজার উত্তর, 'কিছুই প্ল্যান নেই, একটু পরেই বাড়িতে কাউন্সিলর আসার কথা।' সত্যিই তো সে আরেকপ্রস্থ ঝক্কি। কিন্তু আজ তাঁর দিন। কঠোর অধ্যাবসায়ে আজ সে জায়গা পেয়েছে সেরার তালিকায়। তাই এটুকু তো তাঁর প্রাপ্য। অর্জিত তো বটেই। 


উচ্চমাধ্যমিকে জেলায় সপ্তম স্থানাধিকারী সৃজা উপাধ্যায়। কলকাতায় সে প্রথম। ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট। দুরুদুরু বুকে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে এবার সামনে দীর্ঘ পথ চলার পালা। আগামীর প্ল্যান কী, জানতে চাইলে সৃজা জানায়, স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে পড়াশোনা করবে সে। আর আজকের সব ক্রেডিটই সে দিতে চায় তাঁর দিদিকে। বারবার সে কথাই বলেছে সৃজা।


তবে মাধ্যমিকের রেজাল্ট নিয়ে এখনও আফসোস রয়েই গিয়েছে। করোনাকালের ওই 'ঝুড়ি ঝুড়ি' নম্বরে মোটেই খুশি নয় সে। তাই এই রেজাল্টে বেজায় আনন্দ পেয়েছে সদ্য স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে আসা মেয়ে। তাহলে কী হতে চায় সৃজা? ছোটবেলাটা দিদিমনি দিদিমনি খেললেও এখন বদলে গিয়েছে তাঁর ইচ্ছে। শিক্ষিকা হতে চায় না সৃজা। কেন চায় না, সে কথা আগেই বলে ফেলেছে। বর্তমানে দুর্নীতির পরিস্থিতি বেশ প্রভাব ফেলেছে কিশোরী মনে। তাই বদলে গিয়েছে ইচ্ছে, এখন সে স্ট্যটিস্টিকস নিয়েই এগোতে চায়। তাহলে সৃজা কি উচ্চশিক্ষার জন্য শহর ছাড়বে? নাহ! সৃজা বলছে মা-বাবা দিদিকে ছেড়ে মোটেই থাকতে পারবে না সে, ভরসাও পাবে না। তাই এই শহরে থেকেই বাকি স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সৃজা। 


এ তো গেল পড়াশোনা সংক্রান্ত বার্তালাপ। তবে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া সৃজার ঝোঁক রয়েছে আঁকাআঁকিতেও। ভালবাসে গল্পের বই পড়তেও। সদ্য গিটারও শিখছে। বোর্ড পরীক্ষা সেরে ফেসবুকেও প্রবেশ ঘটেছে তাঁর। সবমিলিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের বাধ্য মেয়ের জীবনের নতুন ইনিংস শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সামনে এখন বিস্তর পথ। স্কুলের কলেজের পরীক্ষার পাশাপাশি জীবনের পরীক্ষাতেও সাফল্য় আসুক। শুভ হোক আগামীর পথ চলা। শুভকামনা রইল সৃজার জন্য। শুভকামনা সমস্ত সৃজাদের জন্যও। 


আরও পড়ুন: ABP Live Exclusive: 'রেজাল্ট শুনে প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন বাবা', বলছেন উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে শীর্ষ স্থানাধিকারী শুভ্রাংশু


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI