সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জমি-বাড়ি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ। তার পর অনলাইন লেনদেন অ্যাপ মারফত মোটা টাকা হাতানো। ভিন্ রাজ্য থেকে এসে চার যুবক ব্যান্ডেলে এমনই প্রতারণা চক্র (Cyber Fraud) চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁদের গ্রেফতার করল চুঁচুড়া (Chinsurah News) থানার পুলিশ। উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh), বাংলা এবং মহারাষ্ট্রে এই প্রতারণা চক্রের জাল ছডি়য়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।


গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার সকালে ব্যান্ডেল (Bandel) ডন বসকো স্কুলের উল্টো দিকের একটি বাড়িতে হানা দেয় চুঁচুড়া থানার পুলিশ। সেখান থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল, নগদ টাকা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্লক উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রদীপ সাহানি, সদানন্দ শ্রীবাস্তব ওরফে মনু, মনোজ কুমার এবং শিবম গুপ্তকে। ধৃতরা সকলে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর এবং কুশীনগরের বাসিন্দা। গ্রেফতারির পর তাঁদের আদালতেও তোলা হয় এ দিন। সেকানে ধৃতদের ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যান্ডেলে ছ’হাজার টাকার বিনিময়ে বাড়িটি ভাড়া নেন ওই চার যুবক। অনলাইন ব্যবসা করেন বলে বাড়ির মালিককে জানান তাঁরা। কিন্তু সারাদিন তাঁদের কাউকেই বাড়ির বাইরে দেখা যেত না। বরং রাতের দিকেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত এবং ব্যান্ডেল চার্চ সংল্গন এলাকার এটিএম থেকে টাকা তুলতে দেখা যেত। তাতে সন্দেহ বাড়ে স্থানীয়দের। সেই মতো বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।


আরও পড়ুন: WB Municipal Election Result 2022: বিধাননগর, চন্দনগরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামফ্রন্ট, সরছে রাজ্যের বিরোধী রাজনীতির অভিমুখ?


তার পরেই এ দিন ওই বাড়িতে হানা দিয়ে ধৃতদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের জমি-বাড়ি বিক্রির ওয়েবসাইট igrsup.gov.in থেকে সে রাজ্যের নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতেন ওই চার যুবক। সেখান থেকে প্যান, আধার নম্বর হাতিয়ে, যন্ত্র দিয়ে আঙুলের ছাপ নকল করে নিতেন। তার পর ফোটোশপের মাধ্যমে নকল নথি তৈরি করে পে ওয়ার্ল্ড অ্যাপে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হত। 


তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংযুক্ত করে, কোথায়, কত টাকা জমা রয়েছে, সব জেনে নিতেন। বিএসএনএল-এর নম্বরে ওটিপি আসার ব্যবস্থা করতেন। সেই মতো নিজেদের তৈরি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে প্রথমে টাকা সরাতেন ধৃতরা। তার পর এটিএম থেকে সেই টাকা তুলে নিতেন। এমনকি মৃত ব্যক্তির নামেও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হচ্ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।


চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘সিপিসি কমিউনিটি আউটরিচ করছে। সামাজিক লোকজনের থেকে অনেক তথ্য মিলছে। ফোন মারফত এই রকম একটি মেসেজ পাই।ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা চার যুবককে ডনবস্কো এলাকায় দেখা যাচ্ছে বলে জানা যায়। জানতে পারি,সারাদিন তারা কোনও কাজ করে না।রাতের দিকে তাদের দেখা যাচ্ছে। ওই চারজনকে ধরে জেরা করতেই তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। চার লাখ টাকা নগদ, ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্লক পাওয়া যায়।পে ওয়ার্ল্ট, যেটি আধার বেসড, অ্যাপ তার মাধ্যমে প্রতারিতের নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হতো। ওটিপি যাতে তাদের নম্বরে আসে, তার জন্য বিএসএনএল নম্বর ব্যবহার করছিল।’’


এ দিন তল্লাশি চালিয়ে ধৃতদের কাছ থেকে বহু মানুষের বাড়ি-জমির দলিল, নকল পরিচ পত্র, আঙুলের ছাপ নকল করার সরঞ্জাম, রবারের মোহর, এটিএম কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই, উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ ৪ লক্ষ টাকাও। তিন মাসে ২ কোটি টাকা হাতানোর লক্ষ্য নিয়ে ধৃতরা এই কাজে নেমেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ব্যান্ডেলেই কেন ধৃতরা এসে উঠেছিলেন, তার সপক্ষে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে পুলিশের ধারণা, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ প্রতারণার আঁচ পেলেও অভিযোগ দায়ের করে, অভিযুক্তদের খোঁজ পেতে সময় লাগবে। তত দিনে বেপাত্তা হয়ে যেতে কোনও অসুবিধাই যাতে না হয়, তার জন্যই এ রাজ্যে এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন ধৃতরা। আপাতত পুলিশে হেফাজতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।