সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: আলোর শহরে অন্ধকার। প্রয়াত আলোক শিল্পী বাবু পাল। রাজ্য পেরিয়ে দেশ সহ বিশ্বের দরবারে তাঁর আলো পৌঁছে দিয়েছে উৎসবের আনন্দ। আলোক শিল্পীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া চন্দননগরে। 


প্রয়াত আলোক শিল্পী: পুজো এলেই কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে চন্দননগর পঞ্চাননতলার বাবু পালের আলোর স্টুডিও। যেখানে হরেক আলোর মেলা। প্রতি বছরই নতুন নতুন আলোর জাদু নতুন কিছু সৃষ্টি ছিল বাবু পালের আলোর আকর্ষণ। প্রয়াত হলেন সেই আলোক শিল্পী। বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তিন বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গতকাল গভীর রাতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। অসুস্থ হওয়া পর থেকেই তার স্ত্রী চিত্রলেখা পাল আলোর কাজ দেখাশোনা করেন।


চন্দননগরে আলোর জাদুকর বলা হয় শ্রীধর দাসকে। দেশ-বিদেশে নানা ধরনের আলোর সাজ চন্দননগরের আলোকে প্রথম বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেন। এরপরই বাবু পাল তাঁর নিজস্ব সৃষ্টিশীলতায় চন্দননগরের আলোকে একটা অন্য পর্যায়ে নিয়ে যান। হয়ে ওঠেন বাবু পাল। দীপাবলিতে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের মুম্বইয়ের বাড়ি সাজানোই হোক অথবা দুবাইয়ে শপিং ফ্যাস্টিবল, প্যারিসে বাবু পালের ডাক পড়ত। এমনকী  শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজো থেকে কলকাতার একাধিক নামী দুর্গা পুজো বাবু পালের আলোতেই সেজে ওঠে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায় বাবু পালের আলো অন্যতম আকর্ষণ।


কলকা আর টুনি বাল্বের আলোর বিবর্তন ঘটিয়ে এলইডি আলো দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাতে সফল হয়েছিলেন বাবু পাল। প্রতিবছর সাম্প্রতিক ঘটনার উপর থিমের আলো তৈরি করে তাক লাগাতেন। পুজো বারোয়ারিগুলো শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করত কী আলো তৈরি করে অন্যদের মাত দেওয়া যায় তার জন্য। আর ভরসা ছিল সেই বাবু পাল। ছোটোদের মজার আলো ডিজনি ল্যান্ড থেকে মিকি মাউস এলইডি আলোতে সাজিয়ে তুলতেন। অলিম্পিকস, বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে শুরু করে যে কোনও বড় ঘটনা অনায়াসেই আলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন বাবু।


সমসাময়িক চন্দননগরে অন্য আলোক শিল্পীদের থেকে নিজেকে তাই অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন বাবু পাল। একটা সময় চন্দননগরের আলো মানেই শ্রীধর দাসের নাম ছিল। সেটাই পরবর্তীকালে বাবু পালের হাতে চলে যায়। করোনার সময় দু'বছর যখন কোন কাজ ছিল না তখন কর্মচারীদের ছুটি দেননি। অন্য আলোক শিল্পীদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন। তাই কর্মচারীরা তাকে ভোলেনি। তাঁদের কাছে বাবুদার প্রয়াণ মানে অভিভাবক হারানোর শোক। আলোক শিল্পীর শেষ যাত্রায় শ্রদ্ধা জানাতে আসেন চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা। কর্পোরেশনের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, কাউন্সিলর সহ চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্য ও শহরের অনেকেই। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, "বাবু পাল নেই কিন্তু তাঁর কাজ থেকে যাবে। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, "শিল্পীর কখনো মৃত্যু হয় না। বাবু পাল অনেক কষ্ট করে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। চন্দননগরে শ্রীধর দাসের হাত ধরে যেমন অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছেন।বাবু পালের হাত ধরে অনেক শিল্পী এসেছেন।তারা আগামী দিনে চন্দননগরের আলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বিশ্বের দরবারে চন্দননগরের আলোকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাবু পাল। শ্রীধর দাস বলেন, "বাবু আমার অনেক পরে কাজ শুরু করে। আগে লোহার ব্যবস্থা করত। পঞ্চানন তলায় একজনের থেকে আলো কিনে বাবু কাজ শুরু করে। অলোক প্রামাণিকের কাছে কাজ শিখেছিল। তারপর নিজের চেষ্টায় ও এতদূর পৌঁছেছে। ভালো লাগে যখন চন্দননগরের আলো মানেই বাবু পালের নাম আসে। ওঁর চলে যাওয়া দুঃখের।''


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: R G Kar News: কত সিসিটিভি সচল রয়েছে? আর কোথায় বসানো যাবে? তৎপরতা শুরু আর জি করে