সোমনাথ মিত্র, হুগলি: হুগলি (Hooghly News) জেলার সিঙ্গুরে (Singur News) আলুচাষিদের মাথায় হাত। কারণ, পাইকারি বাজারে আলুর দাম পড়তির দিকে। ফলে এখন আলি হিমঘর থেকে বের করে বিক্রি করলে লোকসান হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন চাষের খরচ জোগাড় করবেন কী ভাবে, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।


সিঙ্গুরে আলুচাষিদের মাথায় হাত


আলু চাষের জেলা হুগলি (Potato Price)। হুগলির সিঙ্গুরের রতনপুর মোড় আলুর পাইকারি বাজার রাজ্যের মধ্যে অন্যতম বড়। কিন্তু যেখানে আলুর এত ফলন, সেই সিঙ্গুরের আলুচাষিদের মাথায় হাত। সিঙ্গুরের পাইকারি বাজারে আলুর দাম আচমকা পড়তে শুরু করেছে।  ফলে নতুন করে আলু চাষের মরশুম শুরু হওয়ার মুখে মাথায় হাত আলুচাষিদের।   


দিন পনেরো পর ধান উঠলেই শুরু হবে আলু চাষ। স্থানীয় সূত্রে খবর, আলুচাষিরা হিমঘরে কিছু আলু মজুত রাখেন, যাতে এই সময় তা বিক্রি করে নতুন চাষের খরচ জোগাড় করতে পারেন। কিন্তু আচমকা দাম পড়ে যাওয়ায়  মাথায় হাত পড়েছে সকলের।  


পাইকারি বাজার সূত্রে খবর, মার্চ-এপ্রিলে হিমঘরে আলু মজুতের সময় ৫০ কিলোর বস্তা পিছু জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা বস্তা।চন্দ্রমুখী আলু মজুত হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা বস্তায়। 


এখন সেই মজুত আলুর দাম অনেকটা পড়ে গিয়েছে। পাইকারি বাজার সূত্রে খবর, হিমঘরে মজুত জ্যোতি আলুর দাম এখন বস্তাপিছু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। চন্দ্রমুখী আলুর বস্তাপিছু দাম হয়েছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা করে পড়ছে। 


আরও পড়ুন: Ananta Roy: লোকসভা নির্বাচনের আগেই 'বঙ্গভঙ্গ'! এ বার ডেডলাইন বেঁধে দিলেন অনন্ত


এমন পরিস্থিতিতে সিঙ্গুরের আলুচাষি রঘুনাথ কোলে বলেন, "আলুর দাম খুব খারাপ। আলু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে আলু চাষ করব ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন কী হবে জানি না। দেনা করে চাষ করতে হবে। দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছে।"


আর এক কৃষক, বিষ্ণুপদ ঘোষ বলেন, "দাম কমে গেছে। কিছু কিছু ব্যবসায়ীর কাজকর্ম তাকে। আলুর দাম এইভাবে পড়ে গেলে কী করব?"


তবে ফড়ে বা ব্যবসায়ীদের জন্য আলুর দাম কমছে, এই অভিযোগ মানতে নারাজ আলু ব্যবসায়ী সমিতি। রতনপুর মোড় আলু ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক প্রহ্লাদ মণ্ডল বলেন, "চাষিদের অভিযোগ ঠিক নয়। এখানে মিডিলম্যান বা ব্যবসায়ীদের কোনও ভূমিকা নেই। হিমঘরে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। যে আলু মজুত আছে, তা নভেম্বরে কেন, ডিসেম্বরেও শেষ হবে না। এই সময় যেহেতু সবাই আলু বের করে দিতে চাইছে, তাই দাম অনেকটা পড়ে গিয়েছে।" 


পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায়, "গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত ছিল। সেই নভেম্বরে কোনও মতেই শেষ হওয়ার নয়। তাি সংগঠনের তাই হিমঘরে আলু সংরক্ষণের মেয়াদ আরও একমাস বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন জানাব।"


চাষের খরচই উঠছে না, দাবি কৃষকদের


সূত্রের খবর, প্রতি মাসে রাজ্যের চাহিদা মেটাতে ৬ থেকে ৭ লক্ষ মেট্রিক টন আলু প্রয়োজন হয়। এখন চাহিদার তুলনায় মজুত বেশি। তার ওপর উত্তরবঙ্গে আলুর দাম কম থাকায় সেখান থেকে আনা আলু দক্ষিণবঙ্গে বিক্রি হয়েছে। উল্টোদিকে দক্ষিণবঙ্গে উত্‍পন্ন আলু কম বিক্রি হয়েছে। এই পরিস্থিতি আলুর পাইকারি দাম বাড়ে কি না, সেদিকেই তাকিয়ে কৃষকরা।