সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যান্ডেল: বিশ্বাস করে যাকে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি, তাদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে ডাকাতি (Dacoity) করানোর অভিযোগ উঠল। হুগলির (Hooghly) ব্যান্ডেলের (Bandel) বিক্রম নগরে বৃদ্ধ দম্পতিকে গান পয়েন্টে রেখে হাত-মুখ বেঁধে ডাকাতির ঘটনার কিনারা করেছে পুলিশ (Cops)। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ১৫ জানুয়ারি ব্যান্ডেলের বিক্রম নগরে বাড়ি ভাড়া খুঁজতে এসে বৃদ্ধ দম্পতি দেবনারায়ণ দত্ত ও অঞ্জলি দত্তকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হাত-মুখ বেঁধে রেখে লুটপাট চালায় চারজন। ভর সন্ধেবেলা এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও, কোনও সূত্র পাচ্ছিল না। চুঁচুড়া থানার আই সি অনুপম চক্রবর্তী তদন্তকারী আধিকারিকদের নিয়ে একাধিকবার বিক্রমনগরে যান। কেউ সন্দেহের উর্ধ্বে নন ধরে নিয়ে তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাড়িওয়ালা দেবনারায়ণ দত্ত ও তাঁর ভাড়াটেকে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের নজরে রেখে পুলিশ মৃণাল ওরফে পুচাইয়ের খোঁজ পায়। বাঁশবেড়িয়া খামারপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পুচাইকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দীপক দে ডাকাতির বরাত নিয়েছিল। অস্ত্রের যোগানও দেয় সে। পুচাই জানায়, আজ উত্তরপ্রদেশে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। এরপর দ্রুত ব্যান্ডেলে পৌঁছে স্টেশনের সামনে থেকে দীপক দে, অভিজিৎ দাস ও বিশ্বজিৎ শর্মাকে ওরফে কেলে বিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন ধরা না পড়তে সিসিটিভির তার কাটল চোর, দোকানে সিঁধ কেটে নিয়ে গেল ৬০ লক্ষের মোবাইল
দীপক পুলিশি জেরায় জানায়, ভাড়াটে অঙ্কন মিত্র ওরফে রানা তাকে ডাকাতির বরাত দেয়। রানা তাকে বলে, ডাকাতি করে আড়াই লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে।
দীপকের কাছ থেকে এ কথা জানার পরেই পুলিশ দেবনারায়ণবাবুর বাড়ি থেকেই ডাকাতির ঘটনার মূল চক্রী ভাড়াটে রানাকে গ্রেফতার করে। পুচাই, দীপক, অভিজিৎ ও কেলে বিশু বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলের দুষ্কৃতী।
পুলিশ সূত্রে খবর, রানা সাত মাস ধরে দত্তবাড়িতে ভাড়া ছিল। বাজারে ধার দেনা হয়ে যাওয়ায় বাড়িওয়ালার ঘরেই ডাকাতির পরিকল্পনা করে সে। এর জন্য দীপকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। দীপকের কাছ থেকে একটি বাইক কিনেছিল রানা। সেই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়। পরিকল্পনা করা হয়, বাড়ি ভাড়া খোঁজার অছিলায় বাড়িতে ঢুকতে হবে। যেদিন ডাকাতি হয় তার তিনদিন আগেও একবার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় বৃদ্ধ বাড়িওয়ালা সেদিন তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেননি। এরপর ১৫ জানুয়ারি ফের আসে ডাকাতরা।
ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন? পুলিশ সূত্রে খবর, রাত আটটা নাগাদ দেবনারায়ণ দত্তর বাড়িতে ঢুকে পড়ে চারজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। তাদের দিনে বেলা আসতে বলেন বৃদ্ধ। কিন্তু তারা বলে, দু-একটা কথা বলেই চলে যাবে। এরপর ঘরে ঢুকে জল খেতে চায়। বৃদ্ধ পিছন ফিরতেই তাঁর মুখ চেপে ধরে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মুখ চেপে ধরে। বৃদ্ধর স্ত্রীকেও বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। এরপর তারা অবাধে লুটপাট চালায়।
এই ডাকাতির ঘটনারই কিনারা করল পুলিশ।