অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, হুগলি: নিয়োগ-দুর্নীতির (Recruitment Scam) অভিযোগে চুঁচুড়া (Chinsurah) পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি (BJP)। চুঁচুড়ার পিপুলপাতি মোড় থেকে মিছিল করে পুরসভার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। চেয়ারম্য়ানের উদ্দেশ্য়ে 'চোর' বলে কটাক্ষও করে বিজেপি কর্মীরা। পুর চেয়ারম্যানের দাবি, তাঁর আমলে কিছু অস্থায়ী নিয়োগ হলেও, কোনও দুর্নীতি হয়নি। উল্টে পূর্বতন চেয়ারম্য়ানকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তৃণমূল (TMC) নেতা। 


পুর 'দুর্নীতি', বিজেপির বিক্ষোভ


শিক্ষক নিয়োগকাণ্ডে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। শিক্ষার মতোই পুরসভাতেও ব্য়াপক নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে কি না সেই প্রশ্নও এবার জোরাল হচ্ছে? দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে চুঁচুড়া পুরসভার সামনে। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার গেটে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ, স্লোগান, চেয়ারম্য়ানকে 'চোর' বলে কটাক্ষ। এরইমধ্য়ে পুরসভায় ঢুকতে গেলে চেয়ারম্য়ানের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের উত্তপ্ত বাক্য় বিনিময় হয়।

কিন্তু কী কারণে বিজেপির এই বিক্ষোভ? এর সুত্রপাত, সুকান্ত মজুমদারের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে। বুধবার, চুঁচুড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নিয়োগে লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ করেন বিজেপির রাজ্য় সভাপতি। বুধবার তিনি বলেন, 'আরও নতুন তথ্য় পাওয়া গেছে। চুঁচুড়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সরস্বতী পাল, তাঁর তো বাড়ির কাউকে বাকি রাখেননি, কাজের লোক থেকে যে LIC করাতেন, তাঁকেও চাকরি দিয়েছে। এই চাকরি বিক্রি তৃণমূল ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়।'

চুঁচুড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সরস্বতী পাল বলেন, 'উনি যে কাজ দেওয়ার কথা বলেছেন সেটা পুরো ভিত্তিহীন। আমার পরিবারের দু একজন যদি পৌরসভার কাজ পেয়ে থাকে পুর প্রধানের কাছে অনুরোধ করে তাহলে সেটার মধ্যে ভুল কোথায়। আমার পরিবারে আমার ছেলে মেয়ে কেউ কাজ করে না। যিনি এলআইসি করেন তাঁকে কাজ দেওয়া কী করে সম্ভব। আগে আমার স্বামী কাউন্সিলার ছিল সে তাকেই কাজ দিয়েছে যে নিঃস্বার্থভাবে দল করেছে।'

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই, নিজের দিক থেকে অভিযোগের নিশানা আগের চেয়ারম্য়ানের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন, চুঁচুড়ার পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্য়ান। চুঁচুড়া পুরসভার তৃণমূল নেতা ও চেয়ারম্য়ান অমিত রায় বলেন, 'অস্থায়ী পদে কিছু লোক নিয়োগ হয়েছে, তাতে কাউন্সিলররা যদি নিজের কাউকে যোগ্য বলে মনে করে থাকেন তো যা কাজ দিয়েছেন।'

উল্লেখ্য়, এর আগেও চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ২০২০ সালে, তৎকালীন চেয়ারম্য়ান, তৃণমূল নেতা গৌরীকান্ত মুখোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁরই দলের সদস্য়, সেই সময়ের পুর বোর্ডের মেম্বার অমিত রায়। বর্তমানে যিনি চেয়ারম্য়ান পদে। ৭৬ জন পিওন ও ২ টি মজদুর পদে নিয়োগে দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ তোলেন অমিত রায়। শেষমেষ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের হস্তক্ষেপে পুরো প্যানেল বাতিল হয়।


আরও পড়ুন: Malda: প্রশাসনিক নির্দেশ অমান্য করে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে 'তোলা' নেওয়ার অভিযোগ মালদায়

সূত্রের খবর, সেই সময় চুঁচুড়া পুরসভার নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল নৈহাটির এক সংস্থা। OMR শিট তৈরি থেকে মূল্য়ায়ণ... সবই ছিল তাঁদের দায়িত্বে। সেই সংস্থাও ব্য়াপক দুর্নীতি করে বলে অভিযোগ। চুঁচুড়া পুরসভার তৃণমূল নেতা ও চেয়ারম্য়ান অমিত রায় বলেন, 'একইভাবে ওএমআর শিট সরবরাহকারী সংস্থা বা বেসরকারি নিয়োগ সংস্থা কারচুপি করেছে। তার সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত ছিল।' গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়ের কথায় অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই অভিযোগ! একদিকে শেষ হচ্ছে না দুর্নীতির তালিকা, আরেক দিকে নিয়োগের দাবিতে রাস্তায় বসে যুব সমাজ।