সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: হুগলির এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড যেনও, অনুরাগ কাশ্যপের 'গ্যাংস অব ওয়াসিপুর'-কেও হার মানায় ! অতীতে প্রেমিকাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখেছিল প্রেমিক। দিল্লির ওই ঘটনায় শিউরে উঠে ছিল সারা দেশ। তারপর কিছু মাস আগে, প্রায় একইরকম মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল কলকাতা। এশহরেই বাংলাদেশের সাংসদকে খুন করে টুকরো টুকরো করে নিয়ে নানা জায়গায় ফেলে আসার অভিযোগ উঠেছিল। আরও কয়েক বছর পিছিয়ে গেলে রাজ্যের বুকে হয়েছিল একটি নৃশংস খুনের ঘটনা। তা 'বিষ্ণু মাল হত্যাকাণ্ড'। অবশেষে ৪ বছর পর, সেই মামলায় চুঁচুড়া আদালতে ফাঁসির সাজা হল কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস-সহ ৮ জনের।
বিষ্ণু মাল হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির সাজা ঘোষণা চুঁচুড়া আদালতের
চুঁচুড়া আদালতে ফাঁসির সাজা হল কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস-সহ ৮ জনের। বিষ্ণু মাল হত্যাকাণ্ডে সাজা ঘোষণা হল চুঁচুড়া আদালতে। কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস ও তাঁর সাত সঙ্গীকে গত ২৫ নভেম্বর দোষী সাব্যস্ত করে চুঁচুড়া আদালতের ফার্স্ট ফাস্ট ট্রাক কোর্ট।আজ সাজা ঘোষণা করেন বিচারক শিব শঙ্কর ঘোষ। চার বছর আগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দোষীদের সাজায় খুশি মৃত যুবকের পরিবার।
ঠিক কী হয়েছিল ?
ত্রিকোণ প্রেমের জেরে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর চুঁচুড়া শহরের জনবহুল এলাকা রায়ের-বেড় থেকে বছর তেইশের যুবক বিষ্ণু মালকে বাড়ির সামনে থেকে মোটর-বাইকে করে তুলে নিয়ে যায় হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস ও তাঁর সাগরেদরা। সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষ্ণুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিশাল।
দেহ ৬ টুকরো করেছিল বলে অভিযোগ
ধড় ও মুন্ডু আলাদা করেছিল দেহ ছয় টুকরো করে বলে অভিযোগ। পরে প্যাকেটে করে শেওড়াফুলি ও বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকা নয় অপরাধীকে পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিশাল দাস ছাড়াও অভিযুক্তরা হল রামকৃষ্ণ মণ্ডল,রথীন সিংহ,রাজকুমার প্রামাণিক,রতন ব্যাপারী,বিনোদ দাস,বিপ্লব বিশ্বাস,মান্তু ঘোষ,ও সেখ মিন্টু।
দেহাংশ উদ্ধার করলেও, প্রথমে বিষ্ণুর কাটা মুন্ডুর সন্ধান মেলেনি !
পুলিশি জেরায় বিষ্ণুর দেহের খণ্ডিত অংশ কোথায় কোথায় আছে, তাঁর সন্ধান দেয় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ বিষ্ণুর সেই খণ্ডিত দেহাংশ উদ্ধার করলেও, বিশালকে না পাকড়াও করা অবধি , বিষ্ণুর কাটা মুন্ডুর সন্ধান পায়নি পুলিশ ! ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানা এলাকায় ৩ নভেম্বর কয়েকজনকে গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে বিশাল। পরে চন্দননগর পুলিশ তাকে নিয়ে আসে চুঁচুড়া থানায়।বিশালই সন্ধান দেয় বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু কোথায় ফেলেছে।তারপর বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় মুন্ডু উদ্ধার করে পুলিশ।
রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে বিষ্ণুর পরিবার
চুঁচুড়া শহরে এই নারকীয় হত্যার নিন্দায় সরব হয় সব অংশের মানুষ। যতবারই দুষ্কৃতি বিশাল দাস ও তাঁর সাগরেদদের আদালতে তোলা হয়েছে। ততবারই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়েছে।এই নারকীয় হত্যার দোষীদের ফাঁসির দাবিতে।আজ 'বিষ্ণু মাল হত্যাকাণ্ড' মামলার চুড়ান্ত রায়দানে আদালতের সামনে অপরাধী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে জড়ো হয় বহু মানুষ।কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় আদালত চত্বর। রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে বিষ্ণুর পরিবার।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।