সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপ সরকার ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি : হুগলির (Hooghly) ডানকুনির (Dankuni) বাসিন্দা এক পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এরপর থানায় গেলে অভিযোগও নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন শাসকদলের অভিযুক্ত কাউন্সিলর।


ডানকুনির বাসিন্দা দীপা সেনগুপ্ত বলেন, উনি এসে বলে গেলেন যে, আমার কথা না শোনা হলে আমি খুন করে দেব। আর এরপরে রাস্তায় বেরনো! আমরা প্রচণ্ড ভয়ে আছি। পুলিশও তো এখনও পর্যন্ত কোনও কিছু করেনি। আমরা এই নিয়ে অনেক ভয়ে আছি।


তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এবার দাদাগিরির অভিযোগ উঠল হুগলির ডানকুনিতে। অভিযোগ, জমি নিয়ে বিবাদের জেরে এক পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন শাসকদলের কাউন্সিলর! ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছে না ডানকুনির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেনগুপ্ত পরিবার। 


বাড়িতেই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন কালাচাঁদ সেনগুপ্ত। সমস্যার সূত্রপাত লোহার বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে। অভিযোগকারীর দাবি, প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি বিবাদ মেটাতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নিজের জমির অংশের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে সেখানে লোহার বেড়া দিয়ে দেন। অভিযোগ, এরপরেই তাঁর বাড়িতে চড়াও হন ডানকুনি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়। 


অভিযোগকারী ও ডানকুননির বাসিন্দা কালাচাঁদ সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। ওখানকার কাউন্সিলর হচ্ছেন কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়। তো উনি এসে আমায় ডাকেন। কে দিয়েছে এই লোহার পাইপ দিয়ে তারটা ? আমি বেরিয়ে বলি, আমি দিয়েছি। বলছে, কেন দিয়েছেন? আমি বললাম, কোর্টের অর্ডারে দিয়েছি। তখন উনি বলছেন, কোর্ট আমাকে দেখাচ্ছেন ? আমিই কোর্ট। আইন আমি-ই। এই এলাকার সব আমি। বলছে, ওসব জানি না। আপনি কাগজপত্র নিয়ে আমার অফিসে দলিল নিয়ে, এ নিয়ে এসে জমা দিন। আমি বললাম যে, কোর্ট থেকে হয়ে এসেছে, আমি তোমার কাছে কেন জমা দেব? বলছে যদি বাঁচতে চান, না হলে আপনাকে, আপনার ওয়াইফকে মেয়েকে খুন করে দেব। আমার নামে ১৫টা কেস আছে। আরও তিনটে হলে আমার কিছু এসে যায় না। 


ঘটনার দিনের ছবি ধরা পড়েছে অভিযোগকারীর বাড়িতে লাগানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। সেখানে আঙুল উঁচিয়ে অভিযোগকারীর উদ্দেশে কিছু বলতে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরকে। এই ঘটনার পর শাসকদলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ডানকুনি থানায় অভিযোগ জানাতে যান অভিযোগকারী। কিন্তু সেখানকার অভিজ্ঞতা আরও ভয়ানক! কালাচাঁদ সেনগুপ্ত বলেন, থানায় আমি গিয়েছিলাম মেয়েকে নিয়ে। আমাকে বলল, আপনি পাগল ? কাউন্সিলরের নামে এসেছেন ইয়ে করতে....যান। বাইরে থেকেই বলেছে। আমি বললাম এরকম একটা ডায়েরি করব। তো আমি ভয়ে চলে আসি। 


যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডানকুনি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়।


এদিকে এই ইস্যুতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, বঙ্গে তো আদালত পুলিশ বলে কিছু নেই। সবই তৃণমূল। নেতারা মনে করেন তারাই পুলিশ, আদালত। নেতারাই বিচার করে....এটাই চরিত্র।


শেষে ইমেল করে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটে অভিযোগ জানান এই ব্যক্তি। তারপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ।