সোমনাথ মিত্র, সিঙ্গুর : রাজ্যে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসে উদ্বেগ বাড়ছে হুগলি জেলার আলুচাষিদের। আলুর(Potato) বীজ বোনার সময় বেশি বৃষ্টি হলে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
জওয়াদের(Cyclone Jawad) প্রভাবে বাংলায় দুর্যোগের আশঙ্কা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। সোমবারও বৃষ্টি হবে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে।
এরাজ্যে ঘূর্ণিঝড় জওয়াদ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। যদিও এর প্রভাবে গতকাল থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কার মেঘ সরছে না হুগলির কৃষকদের মন থেকে। কারণ, ঘূর্ণিঝড় না এলেও দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা।
সিঙ্গুরের কৃষক জগমোহন মণ্ডল বলেন, বৃষ্টি হলে আর আলু চাষ হবে না। যদিও পরে চাষ করি তাহলে আলু ছোট হয়ে যাবে, ভাল হবে না। উৎপাদন অনেক কমে যাবে।
খানাকুল, আরামবাগ, গোঘাট, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া- এবছর বর্ষার শুরু থেকে পুজোর আগে পর্যন্ত তিন-তিনবার জলমগ্ন হয়েছে দামোদর, রূপনারায়ণ, শিলাবতী নদীর তীরবর্তী এই সব এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ। তার ওপর আবার ভারী বৃষ্টি হলে আলু চাষ কতটা হবে তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার কৃষকরা।
সুকুমার বেরা নামে সিঙ্গুরের অপর এক কৃষক বলেন, এমনিতেই বৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। মাটি এখনও ভিজে। এরপর যদি ভারী বৃষ্টি হয় তাহলে আর চাষ করা যাবে না, বাড়িতেই সার, বীজ পড়ে থাকবে। যারা বীজ বসিয়েছে তাদের বীজ পচে যাবে।
হুগলি(Hooghly) জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে মোট আলু উৎপাদনের তিন ভাগের এক ভাগ হয় হুগলিতে। হুগলি জেলায় প্রতি বছর গড়ে ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। বছরে ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয় হুগলিতে।
হুগলিতে আলু চাষ মার খেলে উৎপাদন ঘাটতির কারণে দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সিঙ্গুর-রতনপুর আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রহ্লাদ মণ্ডল বলেন, এখন যদি ভারী বৃষ্টি হয় তাহলে চাষ আরও ১৫-২০ দিন পিছিয়ে যাবে। অগ্রহায়ণ মাস শেষ হয়ে যাবে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং আগামী বছর আলুর দাম ৫০ টাকা পার হয়ে যাবে।
হুগলি জেলার কৃষি অধিকর্তা জয়ন্ত পাড়ুই বলেন, দুর্যোগ কাটলে আগামী ১০ দিনে সব জমিতে আলু বসানোর কাজ হয়ে যাবে। লম্বা শীতকাল থাকলে কোনও অসুবিধা হবে না।
তাই, বেশি বৃষ্টি যেন না হয়। বরুণদেবের দিকে তাকিয়ে এখন এই প্রার্থনাই করছেন হুগলির আলু চাষিরা।