সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি : অক্ষয় তৃতীয়া। পাঁজি মতে, পয়লা বৈশাখের পর বাংলা বছরের প্রথম শুভদিন অক্ষয়তৃতীয়া ৷ এদিনও হালখাতা হচ্ছে দোকানে দোকানে৷ সেই উপলক্ষ্যে লক্ষ্মী-গণেশের পুজো করাতে এদিন বিভিন্ন মন্দিরে ভিড় করেছেন ব্যবসায়ীরা ৷ এদিন থেকেই অনেকে ব্যবসার শুভ সূচনা করেন। এই  দিন থেকে শুরু হয় প্রভু জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা। 


কলকাতা : আজ শুক্রবার, অক্ষয় তৃতীয়া।  এদিন সকাল থেকেই হুগলির মাহেশের মহাপ্রভু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার চন্দনযাত্রা শুরু হল।  ৬২৮ বছরের প্রাচীন এই উৎসবকে ঘিরে  মন্দির চত্বর ছিল মুখরিত। ভোর চারটেয় মঙ্গল আরতির পর শুরু হয়েছে প্রভুর বিশেষ পুজো পাঠ। শয়ে শয়ে মহিলা এদিন মন্দিরে এসে  বড় বড় পাত্রে চন্দন বাটেন । বেলা দশটার পর শুরু হয় চন্দন যাত্রা উৎসব।


কী এই চন্দন যাত্রা? মাহেশ জগন্নাথ দেব ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানান, 'প্রচণ্ড গরমে আমাদের যেমন মাথা ধরে তেমনই মানব রূপী ভগবান মহাপ্রভুরও এই সময়ে মাথার যন্ত্রণা হয়, মাথা ধরে।' এই  রীতি তার জন্যই। 


মানুষের বিশ্বাস, বহু হাজার বছর আগে এমনই এক বৈশাখ মাসে রাজা ইন্দ্রঘনকে প্রভু জগন্নাথ দেব আদেশ করেন যে 'আমার শরীর খারাপ হয়েছে মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে,আমার মাথায় চন্দন প্রলেপ দেবার বন্দোবস্ত করো। রাজা ইন্দ্রঘন  মহাপ্রভুর আদেশ মতো মাথায় চন্দনের প্রলেপ দেন। সেই সময় থেকেই বছরের পর বছর ধরে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে মাহেশে। 


পিয়াল অধিকারী আরও জানান, এই দিন মাহেশের জগন্নাথদেবের মন্দিরে, প্রভু জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রার মাথায়  চন্দন  প্রলেপ লাগানো হয়, যাতে তাঁর শিরপীড়া দূর হয়, ।  শুক্রবার থেকে টানা ৪২ দিনব্যাপী প্রভুর মাথায় এই চন্দন লেপন চলবে। ৪৩ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হবে মাহেশের মন্দিরে প্রভু  জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার স্নানযাত্রা উৎসব।  সেই উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশের হাজার হাজার ভক্ত সমাগত হন। 


গঙ্গা জল আর দুধ দিয়ে স্নান করানো হবে জগন্নাথ দেবকে। রীতি মেনে, স্নানের পর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে জগন্নাথের। তাই দু’ সপ্তাহ মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। ভক্তদের দেখা দেন না জগন্নাথ। জ্বর সারলে মন্দিরের দরজা খোলে। এরপর রথে চেপে বলরাম, সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথ।