সোমনাথ মিত্র, সিঙ্গুর (হুগলি) : রাস্তার ধারে সরকারি জলের লাইনে পাইপের মুখে লাগানো নেই ট্যাপ কল । তাই গ্ৰামের মানুষের ব্যবহারের সময়টুকু বাদে বাকি সময়টাতে মাটিতে পড়েই নষ্ট হচ্ছে জল। সিঙ্গুরের(Singur) বেড়াবেড়ি ও কেজেডি গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি গ্ৰামে সরকারি জল প্রকল্পের চিত্রটা ঠিক এরকমই।
জল জীবন মিশন, জল ধরো জল ভরো, সরকারি প্রকল্প চলছে দেশজুড়ে। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে, জলের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য। কিন্তু সেই সরকারি জল প্রকল্পে(Water Project) জলের অপচয় !
সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের 'আঁতুড়ঘর' বলে পরিচিত গোপালনগর পশ্চিমপাড়া, নিজ উজ্জ্বল সংঘ, বারোহাত কালীতলা, বাগপাড়া, বাজেমেলিয়া হাসপাতাল চত্বর, উত্তর বাজেমেলিয়া, বেড়াবেড়ি-সহ আশপাশের এলাকায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অধীন রাস্তার ধার দিয়ে জলের লাইন গেছে। রোজ নিয়ম করে সকাল, দুপুর ও বিকালে তিনবার জল দেওয়া হয় কয়েক ঘণ্টা করে। কিন্তু এইসব এলাকার কোনও জলের পাইপের মুখে লাগানো নেই ট্যাপ। গ্ৰামের মানুষের ব্যবহারের সময়টুকু বাদে সব সময়ই মাটিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে জল।
আরও পড়ুন ; সিঙ্গুরে গোবর-গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে বিজেপির ধর্ণামঞ্চের 'শুদ্ধিকরণ' তৃণমূলের
স্থানীয়দের দাবি, ট্যাপ না থাকায় জল পড়ে অপচয় হচ্ছে । স্থানীয় বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েত প্রধানও জল অপচয়ের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবি, ট্যাপ লাগানো হলেও সেটা খুলে দেওয়া হচ্ছে বেশি জল পাওয়ার আশায় । জলের অপচয় নিয়ে শাসক দলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
গোপালনগর বারোহাতকালী তলার বাসিন্দা সজ্ঞয় কোলে জানান, এখন আগের থেকে জল দেওয়ার সময় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। অত জল লাগে না। জল অনেক অপচয় হয়। তাছাড়া এভাবে জল অপচয় হলে ভবিষ্যতে জলের টান পড়ে যাবে।।
কিন্তু, কেন লাগানো নেই ট্যাপ ? সিঙ্গুর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ সাহা জানান, স্ট্যান্ড পোস্টে আমাদের কলগুলো লাগানোই থাকে। কিন্তু কিছু মানুষ অসেচতনার কারণে জলে যাতে বেশি প্রেসার আসে সেই ভাবনা চিন্তা থেকে ট্যাপগুলো খুলে ফেলেছেন। এটা সম্পূর্ণ সচেতনার বিষয়। আমরা পঞ্চায়েতকে বিষয়টা বলেছি, জলের অপচয়ের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে। তাছাড়া স্কিমটি পুরানো হওয়ায় আমরা এই মুহূর্তে বাড়ি বাড়ি সংযোগ দিতে পারিনি। কিন্তু পুনরায় নবীকরণের ডিপিআর অনুমোদন পেয়েছে। সেটা টেন্ডার প্রসেসে আছে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা জল বাড়িবাড়ি পৌঁছে দিতে পারব এবং জলের অপচয় বন্ধ হবে।
সরকারি জল প্রকল্পে এইভাবে জল পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়াকে কটাক্ষ করে বিজেপি হুগলি সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি সজ্ঞয় পান্ডে বলেন, যেখানে সরকার বলছে "জল ধরো জল ভরো", সেখানে এইভাবে জল অপচয় হচ্ছে। সরকারি দফতর থেকে পঞ্চায়েত, তৃণমূল নেতা-নেত্রী সবাই দেখছে, কিন্তু তাদের কোনও হেলদোল নেই। নেতারা কুম্ভকর্ণের ঘুমে ব্যস্ত। তারা চোখে দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু যেখানে কাটমানি আছে সেখানে তারা পৌঁছে যাবে।
বেড়াবেড়ি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, অনেক দিন আগে ট্যাঙ্ক করতে গিয়ে জমি জটে আটকে যায় সরকার। পরে কেজিডি পঞ্চায়েত এলাকার একটি জায়গা থেকে জল সরবরাহ করা হয়। জলের প্রেসার থাকার জন্য পাইপ যাতে ফেটে না যায় তার জন্য ট্যাপ লাগানো হয়নি। জলটা একটু অপচয় হয় । তবে আগামী অর্থবর্ষে এই সমস্যা মিটে গিয়ে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া হবে এবং দুটো রিজার্ভারের অনুমোদন পেয়েছি। সেটা হলে এই সমস্যাটা মিটে যাবে। বিরোধীরা উন্নয়ন চোখে দেখতে পায় না। তারা শুধু রাজনীতি করে। অথচ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে বিজেপি নেতার পরিবাররা আগে দাঁড়িয়ে থাকে।। জলের এই সমস্যা আগামী দিনে মিটে যাবে।