সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: বঙ্গদেশের কালীপুজোর ইতিহাস খুব প্রাচীন না হলেও এক এক জায়গার কালীপুজোর মাহাত্ম্য ও ইতিহাস এক এক রকমের। পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের কালীপুজোর ইতিহাস তেমনই রোমহর্ষক। 


শোনা যায়, ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা নরবলি দিতো পান্ডুয়ার সিমলাগড় মা কালীর কাছে। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো সিমলাগড়ের মা কালী। জানা গিয়েছে, শেরশাহের জি টি রোড তৈরীর আগে এই পুজো শুরু হয়েছিল। সেই সময় ওই এলাকা শ্মশান ও ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। সেখানে ছিল না কোন জনবসতি। মানুষজন ওই এলাকায় যেতে ভয় পেত। ওই এলাকায় তখন ঠ‍্যাঙ্গারে বাহিনীর উৎপাত ছিল। সেই সময় ওই এলাকার এক পুকুর পাড়ে এক কাপালিকের তাল পাতার ছাউনি মাটির দেওয়াল সহ একটি ঘড় ছিল। সেখানেই পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে ঐ কাপালিক কালী সাধনা করতেন। 


লোক মুখে শোনা যায়, ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা ঘন জঙ্গলে এসে নরবলি দিত মা কালীর সামনে। একসময় রঘু ডাকাত এখানে এসে কালী সাধনা করে গেছে বলেও জানা যায় এলাকার ইতিহাস থেকে। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন চলাচলের জন্য এই রাস্তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। তখনই স্থানীয় মানুষজন ভয় কাটিয়ে ওই মন্দিরে পুজো দিতে শুরু করে। এরপরে কালী মন্দিরের উপরে মানুষের বিশ্বাস ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। 


আরও পড়ুন, শ্মশানে ৫টি মানুষের খুলি রেখে শুরু হয় পুজো, স্বপ্নাদেশে পাওয়া পাথরেই পূজিত হন নারায়ণগড়ের ত্রিশূল কালী


মাটির মন্দির সংস্কার করে পরবর্তীকালে একটি বড় মন্দির তৈরি করা হয় ভক্তদের আর্থিক সহায়তায়। একদম জি টি রোডের ধারে সিমলাগড়ের এই কালী মন্দিরের প্রতিমা কিন্তু মাটির নয়, এটি পাথরের তৈরি । প্রতি বছর পুজোর আগে মূর্তিটিকে রং করা হয় । এখানে যারা পুজোর সেবাইত তাদের কাছ থেকে জানা যায়, লক্ষণ ভট্টাচার্যের পরিবারের আদি পুরুষ তার সময় থেকেই কালী পুজো শুরু হয়। 


ইতিহাস থেকে আরও জানা গেছে, এককালে ওই এলাকার নাম ছিল হরিহরপুর। যদিও বর্তমানে এলাকার নাম হয়েছে সিমলাগড়। শোনা যায়, ওই পরিবারের এক তান্ত্রিক তন্ত্র সাধনা করতে এসে ছিন্ন নরমুণ্ড দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এর পরেই তিনি নরবলি প্রথা বন্ধ করে দিয়ে ছাগ বলির ব্যবস্থা করে। এখানে মাকে দক্ষিণা কালী রূপে পুজো করা হয়। প্রতিদিনই চলে নিত্য সেবা। কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজোপাঠের ব্যবস্থা করা হয়। ১০৮ রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় মাকে। বলি প্রথা থাকলেও মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় মাকে। প্রতিবছর বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের সমাগম ঘটে মন্দির চত্বরে। মনস্কামনা পূরণের জন্য অনেকেই মন্দির সংলগ্ন একটি গাছে ঢিল বেঁধে দিয়ে যান।