সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি : ' নীলাচলে পুরুষোত্তম জগন্নাথ নাম । সেই নাম প্রকট হয় মাহেশের ধাম।। নিত্য পূজা, নিত্য ভোগ, নিত্য শাস্ত্র পাঠ। ভক্তজনে জানে তাই মাহেশ শ্রীপাট।।' হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের অনেকেরই মুখে মুখে ফেরে এই স্তব! 


কথিত আছে, সাধক ধ্রুভানন্দ ব্রহ্মচারী ৬২৭ বছর আগে পুরীতে গিয়ে প্রভু জগন্নাথকে (Jagannath Dham ) ভোগ নিবেদনের জন্য স্বপ্নাদেশ পান। কিন্তু শ্রীক্ষেত্রে ( Puri ) গিয়েও তিনি ভোগ দিতে পারেননি। শোনা যায়, ফিরে এসে তিনি ফের স্বপ্নাদেশ পান, গঙ্গায় ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরির।  তারপর সেই নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি কিন্তু মাহেশের এই মূর্তিগুলিও সেই প্রাচীন। 

আরও পড়ুন :


তারাপীঠে 'মা' ঘুরবেন আজ রথে চড়ে, ভক্তদের বিলোবেন আশীর্বাদ, কেন এই রীতি


তবে আগে কাঠের রথ থাকলেও, লোহার রথ তৈরি হয় ১৩৭ বছর আগে। এটি তৈরি করে মার্টিন বার্ন কোম্পানী। ১২৫ টন ওজনের এই রথ ৫০ ফুট উঁচু। লোহার বারোটি চাকা রয়েছে। সেই সময় রথ তৈরিতে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। চারতলা বিশিষ্ট এই রথের একতলায় চৈতন্যলীলা, দ্বিতীয় তলে কৃষ্ণলীলা এবং তৃতীয় তলে রামলীলা চিত্রিত আছে। চার তলায় বিগ্রহ বসানো হয়।


নারায়ণই যেহেতু কলিকালের জগন্নাথ, সেই কারণে নারায়ণ শিলাকেই প্রথমে রথে চড়ানো হয়। তারপর সুভদ্রা
,
বলরাম এবং একেবারে শেষে জগন্নাথকে তোলা হয় রথের ওপর।  রথযাত্রার দু’দিন আগে থেকে শুরু হয় নবযৌবন উৎসব।  প্রথা অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর মন্দিরের দরজা ভক্তদের জন্য বন্ধ থাকে এই সময়। কারণ কথিত আছে, এইসময় জগন্নাথ দেবের জ্বর আসে। কবিরাজের পাঁচন খেয়ে জ্বর সারার পর হয় শুরু হয় নবযৌবন। রাজবেশে সাজানো হয় বিগ্রহকে। পরানো হয় রুপোর হাত।


খিচুড়ি, অন্ন, পায়েস - এই তিন নিয়ে মাহেশ। পুরীর পর দেশে বৃহত্তম রথযাত্রা হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশ রথযাত্রা। এইবছর মাহেশের রথ যাত্রার ৬২৭ তম বছরে পড়ল। মার্টিন বার্ন কোম্পানীর তৈরি লোহার রথের বয়স ১৩৭ বছর। বর্তমানে এই রথের দেখভাল করেন কলকাতা শ্যামবাজারের বসু পরিবার। করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে দুই বছর রথযাত্রা স্তগিত রাখা হয়েছিলো। তবে ২০২২ এ স্বাভাবিক ভাবেই ধুমধাম সহকারে পালিত হয় মাহেশের রথাযাত্রা। গর বছরের মতো এইবছরও রথের চাকা ঘুরবে। 

জগন্নাথ মন্দিরের পাশে স্থানপিঁড়ির মাঠে বসেছে মেলা। বেলা দুটোয় মন্দির থেকে তিন বিগ্রহ কে বের করে রথে তোলা হবে। এরপর বেলা চারটে নাগাদ রথের রশিতে টান পড়বে।