সোমনাথ মিত্র, হুগলিঃ লাল নীল সবুজের মেলা বসেছে লাল নীল সবুজেরই মেলা রে। এক ঝাঁক কচি কাঁচাদের সাথে মহানায়কের গলায় বহুদিন আগের সেই গান মনে করিয়ে দিল সিঙ্গুর মহামায়া প্রাথমিক বিদ্যালয় (Singur School)। কারন, আজ তাঁদের স্কুলে পালিত হল "রিডিং ফেস্টিভ্যাল ২০২২" (Reading Festival 2022)। করোনা অতিমারি কাটিয়ে স্কুলের গন্ডিতে পা রাখার পর প্রথাগত শিক্ষার বাধাধরা ছকের একটু বাইরে গিয়ে এক অনবদ্য পরিবেশবান্ধব শিল্পকলা এবং জ্ঞানের প্রাচুর্যতা প্রকাশ পেল সিঙ্গুর মহামায়া প্রাথমিক স্কুল প্রাঙ্গনে।। লাল নীল হলদে সবুজ বেগুনী গোলাপি সাদা আরো কত কি নানান রঙের মেলায় স্কুল চত্বর হয়ে উঠল রঙের বাহার। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় ছোট ছোট ছেলেদের হাতের শৈল্পিক কারুকার্যে ঝলমলে হয়ে উঠল শিক্ষাঙ্গন।
সমস্ত স্কুল পড়ুয়াদের মাথায় কাগজের টুপি, তাতে আবার কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ বা পরিবেশ মন্ত্রী
সমস্ত স্কুল পড়ুয়াদের মাথায় কাগজের টুপি, তাতে আবার কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউবা পরিবেশ মন্ত্রী, রঙীন কাগজ দিয়ে তৈরী করা বিভিন্ন মডেল। রয়েছে মনিষীদের জীবনি,বিখ্যাত মানুষের ছবি, পাঠ্য পুস্তকের সাথে রয়েছে একাধিক গল্পের বই। রয়েছে ধাঁধার মেলা,মনিষীদের বানী, খ্যাতনামা বাঙালীদের পরিচয়পত্র, স্বচিত্র ঋতুর বৈশিষ্ঠ্য, বাংলা ও ইংরাজী মাসের নাম, বিভিন্ন পশু পাখির মডেল সেই সঙ্গে সংবাদপত্রে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ খবরের সংকলন "সন্দেশ" ম্যাগাজিন এর স্টল সহ আরো কত কী ! ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিকঠাক রিডিং পড়তে পারলে বা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই দেওয়া হচ্ছে একটি করে লজেন্স। আর এত কিছু সাজানো গোছানো দেখতে স্কুল পড়ুয়াদের সাথে আজকে অভিভাবকদের ভিড় উপচে পড়ল স্কুল চত্বরে, ভিড় জমান পথ চলতি অনেক মানুষও।
কিন্তু কেন এত কিছুর আয়োজন ? রিডিং ফেস্টিভালের উদ্দেশ্য কী ?
সিঙ্গুর মহামায়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষিকা সোমা জানা জানান, যেহেতু করোনা জন্য দু বছর স্কুলের পঠন পাঠন বন্ধ ছিল,তাই পড়াশোনার প্রতি ছেলেমেয়েদের ঝোঁক কম ছিল। সে কারনে এই কালারফুল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী পড়ুয়াদের আরো বেশী করে রিডিং পড়ার প্রতি আগ্ৰহ বা উৎসাহ বাড়াতেই এই ধরনের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে । আর এই মেলায় যেভাবে পড়ার জন্য ছাত্ররা ভিড় জমাচ্ছে, তাতে আমরা মাইক্রোফোন সাপ্লাই দিতে পারছি না। তাই এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।। সিঙ্গুর মহামায়া প্রাথমিক বিদ্যালয় তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র শেখ ফারহান শরীফ বলেছে, আজকে স্কুলে রিডিং মেলা হল যেখানে বিভিন্ন ধরনের স্টল আছে । মনীষীদের স্টল, ধাঁধার স্টল, বই পড়ার স্টল, অনেক কিছু। ছাত্ররা সেই সব পড়ে অনেক আনন্দ পেয়েছে। সিঙ্গুর মহামায়া প্রাথমিক বিদ্যালয়এর এই আয়োজনকে প্রশংসা করেছেন অভিভাবকরা।
'ছোট্ট পাখি বা প্রজাপতি বানালে মনটা যেন সেই ছোটবেলায় চলে যায়'
স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আদ্রিজ কর্মকারের মা মৌমিতা কর্মকার বলেন, 'স্কুলের এই পঠন মেলা আক্ষরিক অর্থে রঙের মেলা হয়ে উঠেছে। ছাত্রদের করোনাকালে ঘরবন্দি অবস্থায় সমস্ত রঙ তাদের কাছে একাকার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে এই রঙের মেলায় এসে অনেক কিছু দেখে তাদের মনটা রঙীন হয়ে উঠেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উৎসাহে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আমরা অভিভাবকরা ছোট্ট পাখি বা প্রজাপতি বানালে মনটা যেন সেই ছোটবেলায় চলে যায়। এই ধরনের মেলার ফলে শিশুদের মধ্যে যেমন পারপার্শ্বিক জ্ঞানের ভান্ডার তৈরি হচ্ছে তেমনি মনের বিকাশও ঘটছে।' সিঙ্গুরের শিক্ষাবন্ধু চৈতালী ভট্টাচার্য বসু জানান, 'এই উদ্দ্যোগের মধ্যে দিয়ে ছেলেরা শুধু যে হাতের কাজ শিখছে তা বড় কথা নয়, সবাই মিলে একসাথে যে কাজ করতে হয় ছাত্ররা তা শিখছে। এক কথায় অনবধ্য হয়েছে । স্কুলের চারদিক যেন ঝলমল করছে। সরকারি স্কুলে এই ধরনের উদ্যোগ খুব একটা দেখা যায় না তাই শিক্ষক শিক্ষিকাদের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।'