সোমনাথ মিত্র ও শিবাশিস মৌলিক, বলাগড় : পশ্চিমবঙ্গটাও খুনি-ধর্ষকদের উল্লাসভূমি হয়ে গেল নাকি ? এত সাহস এরা পাচ্ছে কী করে ? রাজ্যে যখন একের পর এক খুন-ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসছে, তখন সোশাল মিডিয়ায় এই প্রশ্ন তুলে, তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। খুন-ধর্ষণ রুখতে সরকারেরও সজাগ থাকা উচিত বলে মনে করেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক। Manoranjan Bapari 


আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে জয়নগর, ফারাক্কা, ফালাকাটা থেকে কুমারগ্রাম, ডোমকল... মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে উঠেছে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ। চিকিৎসক তরুণীর পাশাপাশি, রেহাই পায়নি শিশু-নাবালিকারাও। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য রাজনীতি জল্পনা উস্কে দিল একটি পোস্ট। যে পোস্টে লেখা হয়েছে, আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গটাও খুনি-ধর্ষকদের উল্লাসভূমি হয়ে গেল নাকি ? কিছুই তো বুঝতে পারছি না ! এত সাহস এরা পাচ্ছে কী করে ? বারবার শান্ত নিভৃত গৃহকোণে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিতে !

কোনও বিরোধী দলের নেতা নন, ফালাকাটার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই, এইভাবে সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন হুগলির বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তিনি বলছেন, 'সারা ভারতবর্ষে প্রতি ১৬ মিনিটে একটি করে মহিলা-মেয়ে-নাবালিকা-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রেকর্ড অনুসারে। বাংলাতে এরকম ছিল না। কিন্তু ইদানিং দেখছি, বেশ কয়েকটা পরপর ঘটনা ঘটে গেল। কয়েকটি শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো আমাদের বাংলায় ছিল না। কারা করছে, এদের তো ধরা উচিত, কঠোরতম শাস্তি দেওয়া উচিত।'

এর আগে কখনও দলের অন্দরে দুর্নীতি ইস্যুতে... তো কখনও আবার, দলের নেতার হাতেই খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সরব হয়েছিলেন মনোরঞ্জন ব্য়াপারী। আবার কখনও, টাকার বিনিময়ে পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট বিক্রি থেকে নেতাদের সঙ্গে চোর-ধান্দাবাজের সম্পর্কের অভিযোগ তুলে, সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক। এমনকী দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরই, একবার তাঁর অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগও তুলেছিলেন। এবার একের পর এক, খুন-ধর্ষণের ঘটনায় যখন অস্বস্তিতে তৃণমূল সরকার, তখন তা নিয়ে ফের সরব হলেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক। ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, মানুষের জীবন ও সম্মানের কানাকড়িও দাম এদের কাছে নেই। এত করে খুঁজছি, এদের একটাও কেন আমার হাতের নাগালে আসছে না ! এলে মনের সব দাহ যন্ত্রণা মিটিয়ে নিই।

এনিয়ে তিনি বলেন, 'এই একটা কোথায় সাতজন মিলে ধর্ষণ করেছে। সাতজনই বহিরাগত। সঞ্জয় রায় বহিরাগত। বাঙালির মধ্যে এই রোগটা ছিল না। এখন এই বহিরাগতর দ্বারা সংক্রামিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলায় এই জিনিসটা বাড়ছে। ভয়ঙ্করভাবে এর বিরুদ্ধে সরকারের এবং জনগণের সজাগ থাকা দরকার। প্রতিরোধ করা দরকার।'


যদিও তাঁর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'মাঝেমধ্যে ওঁর বিবেক জাগ্রত হয়ে ওঠে। উনি এর আগেও এধরনের পোস্ট করেছেন। এধরনের বিবৃতি মানুষের সামনে রেখেছেন। যদি উনি সত্যিই অন্তরাত্মা থেকে কোনো ডাক অনুভব করেন, তাহলে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করুন। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দিন। তিনি তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সমালোচনা করেন, আবার দলেই থেকে যান। ' 

রাজ্যে একের পর এক খুন-ধর্ষণের ঘটনায় সরব হয়ে, দলের অস্বস্তি বাড়ালেন তৃণমূলেরই বিধায়ক।