তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: ফের কুসংস্কারের (Superstition) বলি এক গৃহবধূ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিষধর সাপের (Snakebite) কামড় খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ডাক্তারের পরিবর্তে বৈদ্যনাথ বাগদী নামে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অভিযোগ, এই টানাপড়েনেই মৃত্যু হয় তাঁর। অসুস্থ হয়ে পড়েছে ওই গৃহবধূর কোলের শিশুও। বাঁকুড়ার (Bankura) পাত্রসায়ের থানার বালসি ২ নং পঞ্চায়েতের শালোইপাড়া এলাকার ঘটনা।


কী ঘটেছিল?
মৃতার নাম শিখা বাগদি। গত কাল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শিখাকে কোনও কিছুতে কামড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ঠিক কীসের দংশন হয়েছে, সেটি বুঝতে পারেননি শিখার পরিবার। এর মধ্যেই গৃহবধূর হাত জ্বালা শুরু হওয়ায় তাঁকে স্থানীয় বৈদ্যনাথ বাগদী নামে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, ওই ওঝাই জানিয়েছিলেন সাপে নয়, কাঁকড়াবিছায় কামড় দিয়েছে। তাঁর কাছ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় শিখাকে। পরিবারের লোকজনের দাবি, মাঝরাত থেকে শারীরিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে তাঁর। তখন স্থানীয় পাত্রসায়ের ব্লক প্রাথমিক স্থাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে শিখাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তখনই পরিবারের লোকজনও জানতে পারেন যে কাকড়াবিছা নয়, বিষধর গোখরো সাপের দংশনে এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে গৃহবধূর। এদিকে মৃতার বছর চারেকের সন্তানও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা, মায়ের দুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। ওই বাড়ি থেকে বিষধর সাপটি উদ্ধারও হয়েছে। ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া। সঙ্গে আলোচনায় আরও কিছু প্রশ্ন। সর্পদংশনের ক্ষেত্রে কুসংস্কার বাদ দিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যে অত্যন্ত জরুরি, সে নিয়ে প্রচার কতটা কার্যকরী হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা দরকার। কেন এত প্রচারের পরও ওই গৃহবধূকে প্রথমে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝার গিয়ে নিয়ে যাওয়া হল? কেনই বা গ্রামগঞ্জে এখনও এই ধরনের ওঝা বা গুনিনরা সক্রিয়, সেই সবও ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। 


আগেও এক ঘটনা...
গত বছর সেপ্টেম্বরে মালদার চর কাদিরপুরের একটি ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর মেলে, এলাকার বাসিন্দা বছর ২২-এর মিঠুন মণ্ডলকে সাপে কামড়ায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই তরুণকে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পর নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের তরফে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তা নিয়েই গোল বাধে মৃত তরুণের পরিবারের সঙ্গে।  হাসপাতাল ময়নাতদন্ত করতে চাইলেও, ওই তরুণের পরিবার তাতে রাজি হয়নি। বরং দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে উদ্যত হন তাঁরা। হাসপাতাল কর্মীরা বাধা দিলে শুরু হয় বচসা। ধাকাধাক্কি থেকে হাতাহাতি বেধে যায়। এর পর, জোর করে মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে গিয়ে শুরু হয় ঝাড়ফুঁক। নিথর দেহে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় মৃত তরুণের মুখে ঢালা হয় দুধ। মৃত তরুণের ঠাকুমা বলেন, ‘‘আমরা এখানে ঝাড়ফুঁক করাচ্ছি। আমাদের আশা বেঁচে যাবে।’’ কী ভাবে এই ধরনের অন্ধবিশ্বাস আজও বাসা বেঁধে থাকে? ভাবাচ্ছে অনেককে।


আরও পড়ুন:মাছ খান না? ডিমে অ্যালার্জি? প্রোটিন মিলবে কীভাবে?