সুনীত হালদার, হাওড়া: একটানা প্রবল বর্ষণ এবং ডিভিসি (DVC) থেকে জল ছাড়ার ফলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে হাওড়ার আমতায়। গতকাল রাত থেকেই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে দামোদর নদীর জল বাঁধ  টপকে হু হু করে গ্রামে ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে ওই এলাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ১৫ টি গ্রাম।


এই জল উদয়নারায়নপুর থেকে থলিয়া হয়ে শর্টকাট খালের মাধ্যমে মুন্ডেশ্বরী নদীতে মিশছে। বাড়ছে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল স্তর। আগে থেকেই বৃষ্টির জল ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়ার চিতনান দ্বীপ অঞ্চলের নিচু এলাকার কৃষি জমিতে  জমেছিল। এদিকে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল ফুলেফেঁপে ওঠায় প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু কৃষি জমি এবং রাস্তাঘাট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দুর্গত মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে শুকনো খাবার এবং  পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হবে। এছাড়াও উদ্ধার কাজের জন্য এনডিআরএফ টিম (NDRF) ডাকা হয়েছে। 


আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার বদলাতে পারে আবহাওয়া। এই মুহূর্তে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ জেলায়। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের সব  জেলাতে। ভারী বৃষ্টি হবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং নদিয়ায়।বৃহস্পতিবারও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। শুক্রবারও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।


উত্তরবঙ্গে আজ অতি ভারী বৃষ্টি নিয়ে কমলা সতর্কতা। বেশ কয়েকটি জেলাতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি চলবে। বৃষ্টির স্পেল শনিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে।আজ অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং জেলায়। ভারী বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং, কোচবিহার, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুরে। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে।


এই মুহূর্তে সিকিমের পরিস্থিতি ভয়াবহ। নর্থ সিকিমের লোনাক লেকে, মেঘভাঙা বৃষ্টি। তার জেরে চুংথাম বাঁধ ভেঙে ভয়াল আকার নিয়েছে তিস্তা। নদীতে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। জলস্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট বেড়ে গিয়েছে। স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে বাড়ি ঘর-গাছ পালা। পাহাড়ি রাস্তায় ভাসছে গাড়ি। চুংথাম এলাকা কার্যত সিকিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বানভাসি লাচেনও। বন্য়ায় ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক সেনাছাউনি। ২৩ জন সেনা জওয়ানের খোঁজ মিলছে না বলে সেনার তরফে জানানো হয়েছে।


আরও পড়ুন, 'কীভাবে আমাকে দেওয়া ED-র চিঠি, শুভেন্দুর কাছে যাচ্ছে ?' , CBI তদন্তের দাবি অভিষেকের


ভয়াবহ দুর্যোগে বিপর্যস্ত কালিম্পংও। জলের তো়ড়ে ধসে গেছে রাস্তা। তিস্তা বাজার, রাম্পু সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং এবং দার্জিলিং যাওয়ার বিকল্প রাস্তার ওপর দিয়েই বইছে জল। সম্পূর্ণ বন্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এদিকে, তিস্তায় জলস্তর ব্য়াপক বেড়ে যাওয়ায় গজলডোবা, জলপাইগুড়ি় সহ তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলি লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা মাঝারি বৃষ্টি চলবে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে। ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির ফলে উত্তরবঙ্গে পার্বত্য এলাকায় ধস নামতে পারে। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় ধস নামার প্রবণতা সবথেকে বেশি। নদীর জলস্তর বাড়তে পারে উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গে। নীচু এলাকায় জল জমে শস্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা।