সুনীত হালদার, হাওড়া: শ্বশুরবাড়ি চেয়েছিল পুত্র সন্তান হোক। কিন্তু কন্যা সন্তান হওয়ায় পরিবারে চরম অশান্তি শুরু। আর সেই অশান্তির জেরেই শিশুকন্যাকে ছুড়ে ফেলে খুন করার অভিযোগ উঠল বাবার বিরুদ্ধে।  চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বাগনানে। 


ঠিক কী ঘটেছে?


বছর তিনেক আগে বাগনান থানার পূর্ব বাইনানে মাইতি পাড়ার তনুশ্রী জানার সঙ্গে আমতা থানার বাঁকুড়ার প্রসেনজিৎ পালের বিয়ে হয়। স্ত্রী তনুশ্রীর অভিযোগ বিয়ের কয়েক মাসের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা-পয়সার দাবি করত প্রসেনজিৎ পাল। অভিযোগ নেশা করতে গিয়ে স্ত্রীর সোনাদানাও সব বিক্রি করে দিয়েছে সে। এই নিয়ে তাদের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। এরইমধ্যে তনুশ্রী গর্ভবতী হয়। শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছা ছিল তাদের পরিবারে পুত্র সন্তান আসুক। কিন্তু তনুশ্রীর কন্যা সন্তান হয়। অভিযোগ এরপরেই শ্বশুরবাড়িতে চরম অশান্তি মুখে পড়তে হয় তনুশ্রীকে। 


মেয়ে হওয়ায় স্বামী এবং শ্বশুর বাড়িতে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয় তনুশ্রীকে, এমনটাই অভিযোগ। তনুশ্রীর পরিবারের দাবি, প্রায় সময়ই স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিত স্বামী প্রসেনজিৎ। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তনুশ্রীর বাবা মেয়ের সংসারে সুখ শান্তির আশায় নিজের জমানো শেষ সম্বল যতটুকু টাকাপয়সা ছিল তাও মেয়েকে দিয়ে দিয়েছিলেন। 


শুধু তাইই নয়, বলা হয়, কন্যা সন্তানকে চরম অবহেলা করতেন প্রসেনজিৎ। এই অশান্তির কারণে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারাও কয়েকবার এই বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কিছুই ফল হয়নি। বর্তমানে শিশুটির বয়স ১ বছর ৪ মাস । এই অবস্থায় কন্যা সন্তানকে নিয়ে তনুশ্রী শ্বশুর বাড়িতে যায়। সেখানে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোক তাঁকে মারধর করে। সেই সময় বাবা প্রসেনজিৎ তনুশ্রীর কোল থেকে তার কন্যা সন্তানকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। 


এর পরেই মাথায় চোট পায় তাঁদের শিশুকন্যাটি। মা তনুশ্রী সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে চলে আসেন। চিকিৎসকরা শিশুটির এএমআরআই করার পরামর্শ দেন। শ্বশুর বাড়ির লোক ও স্বামী কন্যা সন্তানের এই অবস্থায় চিকিৎসার জন্য কোনও সাহায্য না করার ফলে টাকা পয়সার অভাবে এএমআরআই করা যায়নি বলেই অভিযোগ। এরপর তনুশ্রীর এই শিশুকন্যা অজ্ঞান হয়ে যেত। গতকাল রাত্রে হঠাৎই শিশু কন্যাটির জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার পর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। চিকিৎসককে দেখালে মৃত বলে ঘোষণা করেন তিনি।


এই ঘটনায় স্বামী প্রসেনজিৎ তাদের শিশু কন্যার মৃত্যু সংবাদটি পেয়েও দেখতে আসেনি বলে অভিযোগ। প্রসেনজিৎ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। পাশাপাশি সমস্ত কিছুর অভিযোগ স্ত্রী তনুশ্রী দিকেই করতে থাকেন। বাগনান থানার পুলিশ শিশুটির মৃত্যু নিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।