সুনীত হালদার, হাওড়া: পুলিশি তৎপরতায় চুরি যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার হল অষ্টধাতুর প্রাচীন একটি কালী প্রতিমা (Goddess Kali Idol)। তাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন যে বাড়ি থেকে প্রতিমাটি চুরি গেছিল তার গৃহকর্তা ৮৪ বছরের বৃদ্ধ নগেন্দ্রনাথ কর। ধন্যবাদ জানান পুলিশ আধিকারিকদেরও। শুক্রবার এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল হাওড়ার (Howrah) শিবপুর (Shibpur) থানা।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ৯ টা ২৪ মিনিট নাগাদ একজন অপরিচিত মহিলা শিবপুর থানার অন্তর্গত হালদারপাড়ার নগেন্দ্রনাথ করের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আর মিনিট তিনেকের মধ্যেই ১ ফুট লম্বা অষ্টধাতুর কালী প্রতিমা নিয়ে সে বেরিয়ে যায়। গোটা ঘটনাটাই সিসিটিভিতে ক্যামেরাবন্দী হয়। ওই রাতে বাড়ির লোক যখন মূর্তিটি দেখতে না পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করেন তখন ওই মহিলাকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় শিবপুর থানায়।  


শিবপুর থানার পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গোটা ঘটনার তদন্তে নামে। পুলিশের তদন্তকারী দল হালদারপাড়া এলাকার রাস্তায় থাকা প্রত্যেকটি সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা শুরু করে। প্রতি মিনিটে ওই মহিলার গতিবিধির সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পারে স্থানীয় একটি বিরিয়ানির দোকানে ওই মহিলা বিরিয়ানি খায়। পুলিশ ওই বিরিয়ানির দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে ওই মহিলা ওখানে বিরিয়ানি খেলেও তার দাম দেয়নি। তার পরিবর্তে পরে দাম দিয়ে যাবে বলে সে তার মোবাইল নম্বর দোকানদারকে দিয়ে যায়। পুলিশ তাঁর থেকে মোবাইল নম্বরটি সংগ্রহ করে ওই দোকান থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত ওই মহিলার বাড়িতে গভীর রাতে পৌঁছে যায়। প্রথমে পুলিশের কাছে চুরির কথা অস্বীকার করলেও পরে জেরায় সে ভেঙে পড়ে। তার ঘর থেকেই উদ্ধার হয় প্রাচীন অষ্টধাতুর কালী প্রতিমাটি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় শিবপুর থানায়। 


শুক্রবার দুপুরে কালী প্রতিমার মালিক নগেন্দ্রনাথ করকে উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি দেখায় শিবপুর থানার পুলিশ। মূর্তিটি হাতে পেয়ে চোখে জল চলে আসে বছর ৮৪-এর বৃদ্ধ নগেন্দ্রনাথের। তারপর সবার সামনেই সেটিকে হাতজোড় করে প্রণাম জানিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।  


তিনি জানান, এই মূর্তি তাঁর বাবা বহু বছর আগে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন থেকেই বাড়িতে এই কালী মূর্তি গৃহদেবতা হিসেবে পূজিত হয়। বাড়ির লোকেরা প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার সময় মাকে প্রণাম করে বের হন। এটাই কর বাড়ির রীতি। মূর্তি চুরি যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। চারিদিকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাননি। শেষে পুলিশের তৎপরতায় মূর্তিটি উদ্ধার হওয়ায় তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 


পুলিশ জানিয়েছে, কোর্ট মারফত প্রাপককে তাঁর জিনিস ফেরত দেওয়া হবে। আরও জানায়, ধৃত মহিলার নাম সঞ্চিতা রায়। কিছুদিন আগে তার স্বামী মারা যায়। মেয়েকে নিয়ে সে একাই থাকে। ধৃতের বিরুদ্ধে চুরির মামলা শুরু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আজ তাকে হাওড়া আদালতে তোলা হয়। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Paschim Medinipur: পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ পরিবারের, হাইকোর্টের নির্দেশে ময়নাতদন্ত ডেবরায় মৃত বিজেপি কর্মীর