কলকাতা: হাওড়ায় নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানের (Anis Khan's Brother) ভাইয়ের উপর হামলায় ফের উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের দিকে অভিযোগ। হামলাকাণ্ডে ইতিমধ্য়েই তোপ দেগেছে বিজেপি। এদিন এই ঘটনার পরেই  বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, 'সাধারণ মানুষের কোনও সুরক্ষা নেই। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজের পরিবারকে বাঁচাতেই এখন ব্যস্ত।' হাওড়ায় আনিস খানের ভাইয়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে কটাক্ষ দিলীপের। এবার প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে তৃণমূলের তরফে। 'হামলার ঘটনায় যোগ নেই' বলেই জানিয়েছে তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে কথা বললেন তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন (Santanu Sen)।


এদিন শান্তনু সেন বলেন, 'একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, এইমুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীও ভারতবর্ষের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারেন না। অভিযোগ একটা উনি করেছেন, এর আগে বহুবার এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, পুলিশের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছেন, কোর্টের রায়ে দেখা গিয়েছে অভিযোগগুলি সঠিক নয়। এটা পশ্চিমবাংলা, এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে, তথ্য লোপাটের জন্য এনকাউন্টারে গুলি করে দেওয়া হয়েছে।  এখানে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে। দোষীরা চিহ্নিত হয়। দোষীরা চিহ্নিত হলে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তাঁরা পায়।' 


উল্লেখ্য, হাওড়ায় নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানের খুড়তুতো ভাইকে ধারাল অস্ত্রের কোপ, খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গতকাল গভীর রাতে আমতার সারদা দক্ষিণ খাঁ পাড়ায় নিজের বাড়িতেই আক্রান্ত হন বছর ২৪-র সলমন খান। গুরুতর জখম আনিসের ভাই হাসপাতালে চিকিৎধীন। আনিসের মৃত্যুতে বিচার চেয়ে সরব হওয়াতেই হামলা বলে অভিযোগ। আক্রান্তের পরিবারের দাবি, এর আগেও আনিসের ভাইয়ের ওপর দু’-দু’বার হামলা হয়। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও আমতা থানা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে দাবি। এক্ষেত্রে হাসপাতালে গিয়ে আনিসের ভাইয়ের বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ।


 চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে  হাওড়ার আমতায় আনিস খানের রহস্যমৃত্যু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠে। তদন্ত শুরু করে রাজ্য পুলিশেরই SIT। কিন্তু CBI তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের  দ্বারস্থ হয় নিহতের পরিবার। পুলিশি তদন্তে আস্থা রাখতে না পেরে সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় আনিসের পরিবার। ঘটনার দিন দুই পুলিশ কর্মীর আনিসের বাড়ির দোতলায় ওঠা ও পরে আনিসের মৃতদেহ উদ্ধার, মাঝের সময়টায় ঠিক কী ঘটেছিল, আদালতে তার সদুত্তর দিতে পারেনি সেসময় রাজ্য পুলিশের এসআইটি। ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে পুলিশি অভিযান যে নিয়ম মেনে হয়নি, তা আগেই আদালতে স্বীকার করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তবে জুনের শেষের দিকে মামলার চুড়ান্ত শুনানিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী দাবি করেন, আনিস খানের বাবা পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জমা দিয়েছেন, সেটা তিনি লেখেননি। অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন। তিনি সই করেছেন।


আরও পড়ুন, 'অপমানের আক্রোশেই অতনুকে খুন', সিআইডি-র কাছে দাবি সত্যেন্দ্র-র


প্রসঙ্গত, রাজ্যে একের পর এক হামলাকাণ্ডে গত বছর থেকেই সরব গেরুয়া শিবির। এর আগে ভোট পরবর্তী হিংসার ইস্যু -সহ একাধিক হামলার ইস্যুতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিজেপি কার্যকর্তা অভিজিৎ সরকারের উপর হামলা-হত্যাকাণ্ডেও এর আগে উত্তাল হয়েছিল সারা বাংলা। চলতি বছরে আনিস কাণ্ডে এতটাই বিতর্ক তৈরি হয় যে, তদন্তের স্বার্থে দু-দুবার ময়নাতদন্ত হয়। তবে তারপরেও আনিস ইস্যু নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। এদিন ফের আনিসের ভাইয়ের উপর হামলায় উসকে গেল গোটা ঘটনা।