সুনীত হালদার, হাওড়া: ফি বছর শীতে পরিযায়ী পাখির কলতানে ভরে ওঠে সাঁতরাগাছি স্টেশন লাগোয়া সাঁতরাগাছি ঝিল। হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে জড়ো হয় সাঁতরাগাছি ঝিলে। কিন্তু এবার শীত পড়লেও এখনও সেভাবে পরিযায়ী পাখির দেখা নেই হাওড়ার সাঁতরাগাছি ঝিলে। ফলে পাখি দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পক্ষী প্রেমিকরা।
একসময় হিমালয়ের পাদদেশ, মানস সরোবর, সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা আসত
রাজ্য সরকারের বন দফতর এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ঝিলের মাঝখানে কচুরিপানা দিয়ে ছোট ছোট তৈরি দ্বীপে পাখিরা বসত গড়ত। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি হিমালয়ের পাদদেশ, মানস সরোবর এমনকি সাইবেরিয়া থেকেও পাখিরা এখানে খাবারের সন্ধানে চলে আসত।
ঝিলে দেখা যেত লেসার হুইসলিং ডাক, কমন টিল, গাডওয়াল..
৩৩ বিঘা এই ঝিলে দেখা যেত লেসার হুইসলিং ডাক, কমন টিল, গাডওয়াল, নর্দান পিনটেল, গার্গেনি, ফেরুজেনাস পোচারড, পিগমি গুজ, নাকটা-সহ বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিরা। এর পাশাপাশি পানকৌড়ি, মাছরাঙা, জলপিপি, নানা ধরনের বক-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ভিড় করত। কিন্তু এবছর সময়ে ঝিলিক পরিষ্কার না হওয়ায় গোটা ঝিল কচুরিপানায় ভরে গেছে। পাখিদের বসার জন্য দ্বীপ তৈরি না হওয়ায় পাখিরা এসেও অন্য জায়গায় উড়ে চলে যাচ্ছে।
কেন পাখির দেখা নেই ?
কেন পাখির দেখা নেই ? স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন এবারে শীত দেরিতে এসেছে। তবে প্রতিবছর দুর্গাপুজোর পরেই ঝিল পরিষ্কারের কাজে হাত দেয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের পক্ষ থেকে ঝিলের মাঝখানে কচুরিপানা দিয়ে ছোট ছোট দ্বীপ তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়া ঝিলের অতিরিক্ত কচুরিপানা তুলে নিয়ে পাখিদের চড়ে বেড়ানোর জায়গা করে দেওয়া হয়। সেই কাজটাই এবারে না হওয়ায় পাখিরা কার্যত মুখ ফিরিয়েছে। আবার বিভিন্ন নর্দমার জল ঝিলে মিশে যাওয়ার ফলে জলের দূষণমাত্রা বেড়ে গেছে। এতে পাখিদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। ঝিলের চারপাশে বহুতল বাড়ি নির্মাণ এবং ট্রেনের যাতায়াতের শব্দে অতিষ্ঠ পাখিরা আর এখানে বসতে চাইছে না।
হতাশ
কলকাতার কাছেই এই ঝিলে প্রতিবছর হাতে ক্যামেরা অথবা বাইনোকুলার হাতে পক্ষী প্রেমিকরা পরিযায়ী পাখি দেখতে ভিড় জমায়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং নেচার ক্লাব থেকে সদস্যরা পাখি দেখতে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোরবেলায় পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে। পাখি দেখতে না পেয়ে তারাও কার্যত হতাশ। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন প্রতিবছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ঝিল পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। তাই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখা যায়। কিন্তু এবারে পাখির দেখা নেই বললেই চলে।
কচুরিপানা সরানোর কাজ শুরু
তবে আশার কথা দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকারের বায়োডাইভারসিটি বোর্ড। গত কয়েক বছরের মতো তারা ঝিল পরিষ্কারের দায়িত্ব দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নেচার মেটস নেচার ক্লাবকে। দিন দুয়েক হল ওই সংস্থা কচুরিপানা সরানোর কাজ শুরু করেছে। কিন্তু দেরি হওয়ার কারণে অনেক পাখি এসেও উড়ে যাচ্ছে। ওই সংস্থার সদস্য লীনা চক্রবর্তী বলেন, দেরিতে ঝিল পরিষ্কারের অনুমতি পাওয়ায় এবারে কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কাজটা শেষ করতে। যাতে পাখিরা ভিড় করতে পারে।
শীত জাঁকিয়ে পড়লেও কবে পরিযায়ী পাখির দল দেখা যাবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকৃতির সংসদের পক্ষ থেকে পাখির গণনা করা হবে। তখন জানা যাবে প্রকৃত চিত্র। তবে এখনও পর্যন্ত যা ছবি তাতে স্পষ্ট প্রশাসনিক উদাসীনতায় তবে কি সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল পরিযায়ী পাখিরা ? এই প্রশ্নই উঠছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।