সুনীত হালদার, হাওড়া: স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। তাই চাকরি ছেড়ে জাতীয় সড়কের ধারে এক যুবতী তৈরি করেছিলেন ছোট্ট চায়ের দোকান। কিন্তু স্থানীয় ক্লাবের দাদাগিরিতে বন্ধ হয়ে গেল সেই দোকানটি। দোকান খুলতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি ।
ইংরেজিতে অনার্স,কাতার এয়ারওয়েজে পরীক্ষা দিয়ে পাস
মাস চারেক আগে ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ছোট চায়ের দোকান করেন আন্দুলের বাসিন্দা পাপিয়া ঘোষাল। এর আগে ইংরেজিতে অনার্স গ্রাজুয়েশনের পর তিনি মডেলিং শুরু করেন। বিমানের এয়ারহোস্টেস হওয়ার জন্য একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। কাতার এয়ারওয়েজে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেও লকডাউনের কারণে যোগদানের সুযোগ হাতছাড়া হয়। পরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কাউন্সিলরের চাকরি শুরু করেন।
ভাইরাল চাওয়ালির দোকানের নাম রাশিয়ান টি, টি এমো
কিছুদিন আগে ইউটিউবে এমবিএ চাওয়ালা নামে একটি ভিডিও দেখেন। তা দেখেই চা দোকান খোলার জন্য মন স্থির করেন। মাসচারেক আগে ডোমজুড়ের অংকুরহাটিতে একটি স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ক্লাবের ছেলেদের সহযোগিতায় জাতীয় সড়কের ধারে তৈরি করেন তার সাধের চায়ের দোকান। তাকে সাহায্যের জন্য দুটি ছেলেও কাজে যোগ দেয়। দোকানের নাম রাশিয়ান টি, টি এমো। পাপিয়া চা দোকানের নানা ধরণের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করতেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে খদ্দের। অল্প দিনেই জমে ওঠে চায়ের দোকান। বাইরে থেকেও প্রচুর লোক ওই দোকানে নিয়মিত চা খেতে ভিড় করতেন। তাদের মধ্যে অনেকেই তার সঙ্গে ছবি তুলতেন অথবা রিল তৈরি করতেন।
'মহিলা বলে গ্রামবাসীদের আপত্তি' !
এদিকে দোকানের জনপ্রিয়তা বাড়তেই তাকে নানাভাবে হেনস্তা শুরু হয়। এমনটাই অভিযোগ পাপিয়ার। দিন কয়েক আগে গ্রামবাসীদের নাম করে কে বা কারা তার দোকান বন্ধের ফতোয়া দিয়ে পোস্টার মারেন বলে অভিযোগ। এরপর পাপিয়া আর দোকান খোলার সাহস পাননি। সেই থেকে তালা বন্ধ আছে চায়ের দোকান। খদ্দেররা এসে ফিরে যাচ্ছেন।
ওনার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে নানা ধরণের কুরুচিপূর্ণ ছবি আছে, অভিযোগ স্থানীয় ক্লাব সদস্যের
স্থানীয় ক্লাবের এক সদস্য অভিযোগ করেন, উনি চায়ের দোকান চালাতে আসেননি। গ্রামের পরিবেশটা নষ্ট করতে এসেছেন। ওনাকে লোক দিয়ে দোকান চালাতে বলা হয়েছিল। তা করেননি। ওনার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে নানা ধরণের কুরুচিপূর্ণ ছবি আছে। বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক লোকেরা ওখানে ভিড় করছে। মহিলা বলে গ্রামবাসীদের আপত্তি আছে। তাই দোকান বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
কেন মহিলা ব্যবসা উদ্যোগীকে চরিত্রের দোষ দিয়ে দাগিয়ে দেওয়া হবে ? প্রশ্ন পাপিয়ার
এদিকে পাপিয়া জানিয়েছেন, ওখানকার লোকেদের সহযোগিতা নিয়েই তিনি দোকান খুলেছিলেন। তার প্রশ্ন, মহিলা বলে কেন তাঁকে স্বাধীনভাবে চায়ের দোকান চালাতে দেওয়া হবে না ? কেন তার সম্মানহানি করা হবে ? কেন মহিলা ব্যবসা উদ্যোগীকে চরিত্রের দোষ দিয়ে দাগিয়ে দেওয়া হবে ?গোটা ঘটনা জানিয়ে তিনি ডোমজুড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের এক অফিসার জানিয়েছেন জাতীয় সড়কের ধারে ওই চায়ের দোকানটি সরকারি জমির উপর তৈরি হয়েছে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে সরাসরি দোকান খুলতে সাহায্য করা যায় না। এই পরিস্থিতিতে কবে দোকান খুলতে পারবেন কার্যত তার দিকেই তাকিয়ে আছেন পাপিয়া।
আরও পড়ুন, মুর্শিদাবাদে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ, ৩ জনের মৃত্যু !
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।