সুনীত হালদার, হাওড়া : হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত হাওড়া ( Howrah ) । অতীতে হাওড়া, নামটি উচ্চারণের পর অবধারিতভাবেই চলে আসত শিল্পনগরী কথাটি। কিন্তু সে-সব এখন অতীত। রাজ্যে শিল্প গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিতে ঘাটতি নেই ঠিকই, কিন্তু হাওড়া হারিয়েছে অতীতের গরিমা। একের পর এক জুটমিল বন্ধ হয়েছে। অন্যান্য কারখানাও মুহ্যমান। তাই হাওড়া শহরের বিশ্বকর্মা ( Vishwakarma ) পুজোর জৌলুসও এখন বড়ই ফিকে।
মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়েছেন এই রাজ্যের শিল্পে লগ্নি টানতে। অন্যদিকে হাওড়ায় শিল্পে রুগ্ন দশা নিয়ে পথে নামল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে এটাকে ইস্যু করতে চলেছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হাওড়ায় শিল্প পুনর্গঠন নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় উৎসবের চেহারা নিত হাওড়া শিল্পাঞ্চল। এর পেছনে ছিল শিল্পের সাফল্য। কারণ একসময়ে হাওড়া শিল্পাঞ্চলকে বলা হত শেফিল্ড অফ ইস্ট। ছোট-বড় অসংখ্য কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজো হতো জাঁকজমক করে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ বড় কারখানা বন্ধ। ছোট এবং মাঝারি কারখানাগুলির আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হওয়ার কারণে জাঁকজমক আর সেভাবে চোখে পড়ে না। বড় কারখানাগুলিতেও প্রতিমার দৈর্ঘ ছোট করতে হয়েছে । ছোট কারখানা গুলিতে কোথাও ছবি অথবা ঘট বসিয়ে পুজো হচ্ছে নিয়ম রক্ষার্থে। কারখানার মালিক এবং শ্রমিকরা জানিয়েছেন আর্থিক অনটনের কারণেই নমো নমো করে পুজো হচ্ছে। কলকারখানার দুর্দশা তো ছিলই, তারপর ২০২০ সালে কোভিডের থাবা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে। ব্যবয়াসী গৌতম রায় জানালেন, শিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে আবার রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। রুগ্ন শিল্প চাঙ্গা করার কারও সদিচ্ছা নেই।
কারখানার মালিকরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ কারখানায় নতুন অর্ডার নেই।ছোট কারখানাগুলির নাভিশ্বাস উঠেছে। অভিযোগ, রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্রীয় সরকার শিল্পে সেরকম বিনিয়োগ না করার কারণে কারখানাগুলোর বেহাল পরিস্থিতি । আর শিল্পের এই রুগ্ন দশাকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে ইস্যু করে পথে নেমেছে বিজেপি। সম্প্রতি হাওড়া ময়দান এলাকায় এক প্রকাশ্য জনসভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেন, ' হাওড়ায় শিল্প শেষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী আগেও বিদেশ সফর করেছেন। কিন্তু শিল্পের জন্য এখানে কোনও কাজের কাজ করেননি। ফলে এই দশা'
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিল্প পুনর্গঠন দফতর গঠন করা হয়েছে। হাওড়ায় জাতীয় সড়কের দুপাশে অসংখ্য নতুন কারখানা তৈরি হয়েছে। তাদের আমলে সবকটি জুট মিল চলছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন বিরোধীরা এটাকে ইস্যু করার চেষ্টা করলেও তাতে লাভ হবে না।
রাজনৈতিক আকচা-আকচি ছিল, চলছে, চলবেও। কিন্তু এসবের মাঝে সলতে নিভতে বসেছে বহু শিল্পের। আর তাই শিল্পদেবতার আরাধনার দিনেও ম্লান হাওড়া।
আরও পড়ুন :
বিশ্বকর্মা পুজোর আগে দুর্গাপুজোর কারিগরদের কুর্নিশ, ব্যানার উন্মোচনে অভিনব ভাবনা সমাজসেবী সংঘের