পায়েল মজুমদার, কলকাতা: মাথাব্যথায় কষ্ট পান? আর্থারাইটিসের সমস্যা ভীষণ ভোগাচ্ছে? প্রিয়জনকে ক্যানসারের যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেও কিছু করতে পারছেন না? অনেকের ক্ষেত্রেই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো সুখকর নয়। স্বস্তি পেতে ভরসা ওষুধ। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কতটুকু? যন্ত্রণা ফিরে আসে কিছুক্ষণ পরেই। কিন্তু মনোবিশেষজ্ঞদের (psychologist) কেউ কেউ বলছেন, সুরাহার একটা দুরন্ত উপায় আছে। হিপনোসিস (hypnosis) বা সম্মোহনের মাধ্যমে 'ক্রনিক পেইন'-এ(chronic pain) আক্রান্ত অনেককেই স্বস্তি(relief) দিতে পেরেছেন তাঁরা।
সম্মোহনের কী কারিকুরি?
সোনার পাথরবাটি মনে হচ্ছে? ইন্টারন্যাশনাল সোসাইট অফ হিপনোসিস-র (International Society of Hypnosis) সভাপতি, ডক্টর মার্ক জেনসেন সে কথা মানেন না। রবিবার 'অ্যাকাডেমি অফ হিপনোসিস, ইন্ডিয়া'-র (Academy of Hypnosis, India) উদ্বোধনে নিজের সেই মতামত ভাগ করে নিলেন। হিপনোসিস নিয়ে দীর্ঘদিনের চর্চা তাঁর। সেই অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সম্মোহনের প্রভাব নিয়ে গবেষণাও করেছেন। সবটা থেকেই ডক্টর জেনসেনের মত,'এটি যন্ত্রণার অনুভূতি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়। কষ্ট কমানোর যে অন্যান্য কৌশল রয়েছে, সেগুলোরও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ দুটি ইতিবাচক দিক রয়েছে।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা যে ভালোবাসা, হিংসা, দুঃখ, আনন্দ অনুভব করি তার মূল চাবিকাঠি থাকে মস্তিষ্কের হাতে। সুতরাং যন্ত্রণার অভিজ্ঞতাও মূলত মস্তিষ্কেই তৈরি হয়। আর এখানেই সম্মোহনের কারিকুরি। মস্তিষ্ক আমাদের কাছে যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা যে ভাবে তুলে ধরে, হিপনোসিসের মাধ্যমে তা বদলানো সম্ভব। যন্ত্রণার তীব্রতা কমানো সম্ভব অনেকাংশে। ডক্টর জেনসেন তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, হিপনোসিস হয়েছে এমন ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্তত মাসতিনেক ধরে ইতিবাচক প্রভাব টের পান। 
এতো গেল কাঠখোট্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা। এবার একটা হাতেকলমে ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক? কলকাতার ইনস্টিটিউ অফ সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক-মনোবিদ প্রশান্ত কুমার জানালেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। কোমরের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিলেন এক মহিলা। যন্ত্রণা এতটাই যে তিনি বসতে পারতেন না। হয় শুয়ে থাকতেন নয়তো হাঁটতেন। মনোবিদের কাছে অ্য়াম্বুল্য়ান্সে শুয়ে আসতে হতো। ব্যথা কমাতে তাঁর উপর টানা হিপনোসিস করেছিলেন আইওপি-র এই অধ্যাপক মনোবিদ। ফল? প্রায় ৬০ শতাংশ যন্ত্রণা কমে গিয়েছিল তাঁর। 
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়...
মনোবিশেষজ্ঞদের অনেকের মতেই, এটি কিন্তু ওকোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ফাইব্রোমাইলজিয়া, মাইগ্রেন, ক্যানসার থেকে আর্থারাইটিস-আক্রান্তদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দুরন্ত কাজ দেয়  হিপনোসিস। বিদেশে বহু দিন ধরেই এর চর্চা চলছে। এবার একই পরিষেবা যাতে এদেশের মানুষও পেতে পারেন সেই লক্ষ্য়েই উদ্বোধন হল 'অ্যাকাডেমি অফ হিপনোসিস, ইন্ডিয়া'-য়। কেতাবি পড়াশোনা নয়, হিপনোসিসের মাধ্যমে যন্ত্রণা কমানোই মূল লক্ষ্য অ্যাকাডেমির। রবিবার থেকে যাত্রা শুরু করল তারা।
সম্মোহন মানে যে কোনও ভুলভাল মন্ত্রোচ্চারণ নয়, রীতিমতো বৈজ্ঞানিক চর্চা সেটাও তুলে ধরবে এই অ্যাকাডেমি। মনের সাহায্যে যন্ত্রণা কমানোই যার পাখির চোখ। 


 


আরও পড়ুন:আশা আইসিডিএস কর্মীদের জন্য ৮ হাজারের ফোন, ঘোষণা মমতার