বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: দীর্ঘ দু' বছর করোনা আবহ (Corona Situation) কাটিয়ে এবারে ফের সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহিষাদলের রথের মেলা (Mahishadal Rath)। সিসিক্যামেরা, দ্রোনের নজরদারি ছাড়াও ভিড় সামলাতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ। রথের গাইডম্যাপ প্রকাশ করে এমনই দাবি করলেন পুলিশ প্রশাসন। অন্যদিকে রথসড়কের বেআইনি দখলদারি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


আরও পড়ুন, 


 'ইস্তফা নয়, শিক্ষা সংসদের পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুকে অপসারণ', সামনে এল সরকারি চিঠি


পুরি মাহেশের পর রথের পর ঐতিহ্যমন্ডিত হল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথ। মহিষাদলে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল মহিষাদলে রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায়। মহিষাদল রাজবংশের রানিমা জানকীদেবীর হাত ধরে ১৭৭৬ সালে রথের মেলার প্রচলন ঘটে। রথের ইতিহাস বহু প্রাচীন। আগে সতেরো চূড়া রথ ছিল। এখন তেরো চূড়া রথ হয়েছে। তেরো চূড়া রথের চাকার উচ্চতা ৪ ফুট। বেধ ৮ ইঞ্চি ও পরিধি ১২ ফুট। লোহার পাত দিয়ে মোড়া মোট ৩৪টি চাকা আছে। রথের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। তবে কলস ও ধ্বজা দিয়ে সাজানো হলে উচ্চতা ৫০ ফুটের বেশি হয়ে যায়। প্রথম রথ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় চৌষট্টি হাজার টাকা। বর্তমান সময়ে রথে সাজাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা।


মহিষাদলের রথের কারুভাস্কর্য বা কারুকার্যগুলি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর বহিরঙ্গ সজ্জায় প্রতি কোণে উল্লম্বভাবে যে ত্রিকোণ কারুকার্যযুক্ত থাম লাগানো আছে তা শিল্পীর ভাষায় 'বর্ণা' নামে পরিচিত। এর অলঙ্করণের বিষয়বস্তুও অদ্ভুত যা একান্তই কৌতূহলের উদ্রেক করে। রথের ভাস্কর্য 'দ্য চেন অফ ডেথ' নামে খ্যাত। এই ধরনের একটি কৌণিক ভাস্কর্য যা কিনা সংগ্রহ করে লণ্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে সংগৃহীত হয়েছে। যতদূর অনুমান এই ধরনের উন্নত দারুভাস্কর্যগুলি বেশ প্রাচীন। মহিষাদলের প্রখ্যাত শিল্পী মাধব দে ১৯১২ সালে বর্তমান রথে অনেক মূর্তি ও ঘোড়া দু'টি নির্মাণ করেন। এই ঘোড়া দু'টি তাঁর শিল্পনৈপুণ্যের অনন্য স্বাক্ষর। তবে বর্তমান তেরো চূড়া রথের উন্নত কারিগরি কৃতকৌশলের নৈপুণ্য কিন্তু রাজা লছমন প্রসাদের প্রখ্যাত স্থপতি ফরাসি বন্ধু মশিয়ে পেরুর।


ভারতে একমাত্র কাঠের রথ হল মহিষাদলের প্রাচীন এই রথ। মহিষাদলের রথ মদনগোপাল জিউ-র রথ নামে খ্যাত। মদনগোপল জিউর সঙ্গে থাকেন জগন্নাথ ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ।রথকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই মেলা বসতে শুরু করেছে। রথে ভিড়ের কথা মাথায় রেখে সিসিক্যামেরা দ্রোনের নজরদারির পাশাপাশি,  থাকছে সাদা পোশাকে পুলিশ বাহিনী। ভিড় রুখতে মহিষাদলের রথসড়কে আসার পাঁচটি পয়েন্ট গাড়ি মোটরসাইকেল ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিষাদলের ওসি প্রলয় চন্দ্র।


বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তবে রথ সড়ক যেভাবে ক্রমশ বেদখল হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রথের আগে রথসড়ক পরিষ্কার করা হলেও, রথের পর আবার সেই দখলদারি শুরু হয়ে যায়। বিজেপির অভিযোগ, রথ সড়ক শাসকদলের মদতে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে শাসকদল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।  স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখার কথা বলেছেন মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।