ঝিলম করঞ্জাই, সন্দীপ সরকার, কলকাতা : কিছুতেই কাটছে না করোনা উদ্বেগ। দৈনিক সংক্রমণের হার সামান্য কমলেও, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মৃত্যু। রাজ্যে লাগাতার দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা তিরিশের উপরেই থাকছে।



শনিবার বাংলায় রেকর্ড ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবার সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৩৬। সোমবার ৩৩। আর মঙ্গলবার তা বেড়ে হল ৩৪। দৈনিক মৃত্যুতে শীর্ষস্থান নিয়ে কার্যত রেষারেষি চলছে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে!এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়িয়ে চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলির ICU গুলির ওপর। 

তবে কি ফিরে আসতে চলেছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ের উদ্বেগ? চিকিৎসক অজয় সরকারের মতে, যাঁরা ICU তে যাচ্ছেন, তাঁদের বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডেল্টার সময় নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি, তাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তখনই, অন্যান্য সমস্যাগুলি আরও বাড়ছে।



  • কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে করোনার জন্য CCU বেডের সংখ্যা ৭৯। তার মধ্যে ৪০টিতে রোগী রয়েছেন।

  • এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে CCU বেড রয়েছে ৭৮টি। তার মধ্যে ৭০টিতেই করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন।

  • এখানে HDU রয়েছে ১৯৯টি। তার ৬০টি ভর্তি রয়েছে।

  • বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ICU বেড রয়েছে ৩৩টি। সেখানে ২০ জন রোগী ভর্তি আছেন। 


একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালেরও।



  • অ্যাপলোতে ICU ও HDU মিলিয়ে ৮২টি বেড রয়েছে। তাঁর সব কটিই ভর্তি রয়েছে।

  • আমরি হাসপাতালের ৩টি ক্যাম্পাস মিলিয়ে ICU বেডের সংখ্যা ১২১। এর মধ্যে ভর্তি রয়েছে ১১৮টি।

  • ফর্টিস হাসপাতালের ৩০টি ICU বেডের সবকটি ভর্তি।

  • উডল্যান্ডসে কোভিড রোগীদের জন্য ১৫টি ICU বেড রয়েছে। বর্তমানে সব কটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন।

  • CMRI’র ৬৮টি বেডের মধ্যে ৫১টিতেই রোগী রয়েছেন।

  • আর এন টেগোর হাসপাতালে ICU বেড রয়েছে ৪৮টি। এখানে, মাত্র ৮টি বেড ফাঁকা রয়েছে।

  • কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৮টি ICU বেডের সব কটিই ভর্তি রয়েছে।

  • মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ICU ও HDU মিলিয়ে ৫৫টি বেড রয়েছে। সব কটিই ভর্তি রয়েছে।

  • পিয়ারলেসের ICU ও HDU মিলিয়ে ১৯টি বেডের ১৪টিতে রোগী রয়েছেন।


 ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা জানাচ্ছেন,অনেক সময় হাত পা  ভাঙা বা দুর্ঘটনার কারণে কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তারপর দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সংক্রমিত এবং তাঁদের অন্যান্য প্যারামিটার গুলিও খুব ভাল অবস্থায় না থাকার দরুণ তাঁদের আইসিইউতে দিতে হচ্ছে। আসলে সংক্রমণের মাত্রা এত বেশি বলেই এমনটা হচ্ছে। 


এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের চিকিৎসক শিশির নস্করের মতে, এবা কিন্তু বয়স্কদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের আইসিইউতে রাখতেও হচ্ছে। অক্সিজেন লাগছে। চিকিৎসকদের কারও কারও মতে, যে কোমর্বিড রোগীরা নিজেদের সাবধানে রেখে রক্ষা করতে পারলেও, এবার সংক্রমণ বাড়ায় তাঁরাও সংক্রমিত হয়ে পড়ছেন। সেখানে কিডনির অসুখ, হাই ডায়বেটিক রোগীরা অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের কারও কারও আইসিইউ সাপোর্টও লাগছে। 

করোনার তৃতীয় ঢেউ কি শেষ হতে চলেছে? এই প্রশ্ন যেমন মুখেমুখে ঘুরছে, তেমনই হঠাৎ করে মৃত্যুর সংখ্যাবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।