হিন্দোল দে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কলকাতার কাছে সোনারপুরের (Sonarpur) খেয়াদায়, বালি চুরির (Sand Racket) পর্দাফাঁস হল। এবিপি আনন্দর (ABP Ananda) অন্তর্তদন্তে উঠে এল মারাত্মক ছবি! সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, ভারী ভারী যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে, বিঘার পর বিঘা জমি থেকে চলছে সাদা বালি তোলা।


প্রকাশ্যে বালি চুরি! অন্তর্তদন্তে মিলল মারাত্মক ছবি


কথায় বলে পুকুর চুরি! কিন্তু, এ তো রীতিমতো পুকুর কেটে বালি চুরি! জেলার প্রত্য়ন্ত এলাকা নয়, কলকাতার একেবারে কাছে, সোনারপুরের খেয়াদাতেই রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বালির কারবার। ভারী ভারী যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে, বিঘার পর বিঘা জমি থেকে চলছে সিলভার স্য়ান্ড বা সাদা বালি তোলার কাজ!! অবৈধ বালি খাদান থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকার বালি বিক্রি হচ্ছে শহর-শহরতলিতে। এই ঘটনা কোনও নদী তীরবর্তী এলাকার নয়, বরং এমন কাণ্ড ঘটছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত খেয়াদার বিস্তীর্ণ এলাকায়।

পর পর দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারী ভারী মাটি কাটার যন্ত্র। পুকুরের মাঝে বসানো রয়েছে, শক্তিশালী পাম্প। আর এই দিয়েই সবার চোখের সামনে চুরি হয়ে যাচ্ছে বালি। রাতের অন্ধকারে নয়, একে বারে দিনে-দুপুরে!! খেয়াদা ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের তিহুড়িয়া গ্রামের ছবি, স্তূপ করে রেখা সাদা বালি। অবৈধ বালি খাদানের মালিক বাপি নস্করকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোথা থেকে পাওয়া যায় এই অনুমতি। তাঁর কথায়, 'কোনও পারমিশন নেই, কেউ দেয় না অনুমতি। এটা একদম অবৈধ ভাবে চলছে। বেআইনি সব কিছু চলছে।' কত টাকায় বিক্রি হয় এই বালি প্রত্যেক লরি? '২ হাজার, আড়াই হাজার।'

পুলিশ-প্রশাসনকে টাকা দিতে হয়? তাহলেই অবৈধ ব্যবসায় ছাড়? অন্তর্তদন্তে বাপি নস্করকে বলতে শোনা যায়, 'সে তো নেবেই।' সবাইকে দিতে হয়? বিডিও-ডিএম এর অফিস থেকে আসে? 'সবাই নেয়।'

এরকম কত বাপি ঘুরে বেড়াচ্ছে খেয়াদায়। তাদের একের পর এক অবৈধ বালির খাদান। এবিপি আনন্দ পৌঁছে গিয়েছিল খেয়াদা মোড়ের কাছে, পঞ্চাননতলায়। অভিযোগ, এখানে অবৈধ বালি খাদান চালান দিলীপ মণ্ডল। সেখানেও চলছে প্রকাশ্যে বালি তোলার কাজ।

স্থানীয়দের দাবি, গড়িয়া স্টেশন থেকে যে রাস্তা টালি নালা বরাবর খেয়াদার দিকে গেছে, আগে এখান দিয়েই বয়ে যেত বিদ্যাধরী নদী। পরে নদী গতিপথ বদলায়। ফলে সোনারপুরে খেয়াদার বিস্তীর্ণ এলাকার মাটির একটু নিচেই রয়েছে বালির স্তর। আর, সেটাতেই নজর বালি মাফিয়ার।

বালি চুরিতে কি রয়েছে তৃণমূল যোগ? লরি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পাঁচু মণ্ডল বলেন, 'সোনারপুর-নরেন্দ্রপুর থানা দেড় হাজার করে তিন হাজার নেয় গাড়ি প্রতি মাসে। আমরা সবাই তৃণমূল করি, বেকার ছেলেরা যা করতে পারে তাইই করি?'

সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম বলেন, 'কোন দল করে সেটা দেখতে হবে। দলের কাজ করছে কি না সেটার প্রমাণ দিতে হবে। বালি খাদান চললে ব্যবস্থা করতে হবে।' সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য় সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'যেভাবে বালি তোলা হচ্ছে, কোনদিন বড়সড় বিপদ হবে। রক্ষক নিজেই তো ভক্ষক। পুলিশ তো সব জানে।' 


আরও পড়ুন: Madan Mitra TMC: 'দলকেও মাঝেমধ্যে সিটি- অ্যাঞ্জিওর এর মধ্যে আসতে হবে', সাগরদিঘিতে পরাজয়ের পর মন্তব্য মদনের

জেলা প্রশাসনের উপর দায় চাপিয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার এসপি জানিয়েছেন, বালি খাদান এখানে চলে, এরকম কোনও তথ্য আমার কাছে নেই। যদি, থাকে তাহলে জেলা শাসক-সহ প্রশাসন দেখবে। এটা পুলিশের দেখার বিষয় নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, অবৈধ বালি খাদানের কোনও খবর প্রশাসনের কাছে নেই। এর আগে, যখন খবর এসেছিল, তখন অভিযান চালানো হয়েছিল। আবারও অভিযান চালানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।