রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের জয়জয়কার। কিন্তু এই অভূতপূর্ব ফলের পরেও সেই জেলায় কোনওমতেই থামছে না শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যার জেরে রাজনৈতিক মঞ্চেই শুধু নয়, বিজয়া সম্মিলনীর আসরেও প্রকট হল দলের অন্দরের ফাটল। রবিবার তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীতে দেখা গেল না জেলার ৪ বিধায়ক ও ২ মন্ত্রীকে। তাঁদের মধ্যে আছেন, সামশেরগঞ্জের আমিরুল ইসলাম, সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস, জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেন, খড়গ্রামের আশিস মার্জিত এবং ২ মন্ত্রী সুব্রত সাহা ও আখরুজ্জামান।


কিন্তু বিজয়া সম্মিলনীতে কেন গেলেন না তাঁরা? এই ব্যাপারে বাকিদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। তাঁর নিশানায় তৃণমূলের সাংসদ ও দলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি খলিলুর রহমান ও তাঁর ভাই জইদুর রহমান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, সামশেরগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হন খলিলুর রহমানের ভাই জইদুর রহমান। কড়া টক্কর দিলেও জইদুরকে হারিয়ে দেন আমিরুল। এখন ভোট কেটে গেলেও, আমিরুলের গলায় তা নিয়ে বিরোধিতার চড়া সুর। 


সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলামের কথায়, 'খলিলুর রহমান সাহেব এমপি- জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। তাঁর সহোদর ভাই কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিল। প্রথমে বলা হল যে তিনি ভোটে লড়বেন না শেষে বললেন বোঝাতে পারলাম না। কিন্তু আমরা দেখলাম যে নুর পরিবারের প্রত্যকেটা সদস্য কংগ্রেসের ভোট করল। একটা বাড়ি থেকেই তৃণমূল দলটা পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে কংগ্রেসের মিটিং হচ্ছে। কংগ্রেসের সব নেতারা সকাল বিকেলে সেখানে ওঠবোস করত। আজকে যখন বিজয়া সম্মিলনী হল তখন নুর পরিবারের ব্যক্তিগত বাড়িতে যদি অনুষ্ঠান হয় সেখানে কীভাবে যাওয়া যায়?'


পরিবারকে টেনে এভাবে সংগঠনের জেলা সভাপতিকে, দলীয় বিধায়কের নিশানা করায় চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির।


জঙ্গিপুর তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সাংসদ ও জেলা সভাপতি খলিলুর রহমানের কথায়, 'জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার বিজয়া সম্মিলনী, মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যান্য যে আরও বিধায়ক আমাদের দলের রয়েছেন তাঁদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। এর দায়িত্বে ছিলেন কানাই চন্দ্র মণ্ডল। আমিও অনেককে ফোন করেছিলাম। অনেকে এসেছেন, আবার কেউ চিকিৎসার জন্য কেউ ব্যাঙ্গালোরে আছেন, কেউ তামিলনাড়ুতে আছেন। জরুরি কাজ রয়েছে। বাকি এমনি সব ঠিকই আছে।'


মুর্শিদাবাদে বিধানসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব ফল করার পরে শাসকদল কীভাবে এই কোন্দল সামাল দেয়, সেটাই এখন দেখার।