কলকাতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন এক বিষয় যার সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে স্কুল স্তরে, রাষ্ট্রের পরিকাঠামো থেকে পরিকাঠামো থেকে তার ইতিহাস জানা একজন নাগরিক হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু WBCS পরীক্ষাতেও এই গুরুত্ব রয়েছে এই বিষয়ের? WBCS পরীক্ষার আগে কীভাবে ইন্ডিয়ান পলিটির জন্য প্রস্তুতি নেবেন ছাত্রছাত্রীরা? এই নিয়ে আলোচনা করলেন WBCS অফিসার প্রতীক মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে যিনি দুর্গাপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার।


 


এবিপি লাইভ: সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় কেন গুরুত্বপূর্ণ পলিটি?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: আসলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান কোনও একটা দেশের পরিকাঠামো, কীভাবে সেই দেশটা চলছে এবং সেই দেশের মানুষ কী কী সুবিধা , স্বাধীনতা পাচ্ছে তা জানা যায়। দেশ চলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটা। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য আমরা মূলত পড়ি ইন্ডিয়ান পলিটি। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য আমরা মূলত পড়ি ইন্ডিয়ান পলিটি। ভারতের যে রাজনৈতিক পরিকাঠামো, দেশ চালানোর উপায়, সেই সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়। এই ভিতটা শক্ত না হলে তাহলে কাজের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সমস্যা হবে। কারণ কাজ করতে গিয়ে একাধিক নিয়ম, নীতি, আইন, ধারার প্রয়োজন পড়ে। এর পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যেমন কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, তাদের ক্ষমতা,নাগরিক হিসেবে সুবিধা –এই সব কিছু না জানলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা সম্ভব নয়।


 


এবিপি লাইভ:  কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মনে রাখতে হবে?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: আমাদের দেশে রাজ্যের কিছু কিছু স্বাধীকার রয়েছে। সেখানে আবার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভাগ ভাগ করে যদি পড়া যায়, যেমন প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, বিচারবিভাগীয়  সম্পর্ক তবে মনে রাখা সহজ হবে। তালিকা করে আবার পড়া যায় কোন কোন ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকা বেশি। যেমন- প্রশাসনিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এখানকার আমলাকে প্রয়োজনে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া যায়। আবার এরাজ্যের কোনও বিষয় নিয়ে চুক্তি হলেও তা যদি বিদেশনীতির আওতাধীন হয়, তাহলে কেন্দ্রকে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।


 


এবিপি লাইভ: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যে ইতিহাস রয়েছে তা মনে রাখা কতটা প্রয়োজন?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: ইতিহাস আসলে সেই জিনিসটাকে তুলে ধরে যার উপর ভিত্তি করে আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি। যখন আমি আইন বা নীতি সম্পর্কে পড়তে যাব তখন প্রথমেই মনে হবে এই যে কেন এটা হল। অর্থাৎ কীসের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে? দেখা যাবে কোনও না কোনও ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন বা নিয়ম। যেমন প্রত্যেকের ভোট দেওয়ার অধিকার। ব্রিটিশ সরকার থাকাকালীন তাদের তৈরি করা আইন তো অবশ্যই আছে, কিন্তু তাছাড়াও ঘটনার উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি হয়েছে। ইতিহাস না জানলে একজন সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হবে। তেমনই আজকের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝা সম্ভব হবে না।


 


এবিপি লাইভ: পলিটি পড়ার জন্য কি সংবাদ এবং সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: ইন্ডিয়ান পলিটির ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ঘটনা যেমন ব্রিটিশ শাসনকাল বা তার পরবর্তী সময়ে যে পরিবর্তনগুলি পড়ি সেগুলোর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ের বদল হচ্ছে। নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে। যেমন ১৫ বছর আগেও সাইবার ক্রাইম নিয়ে কোনওরকম ধারণা ছিল না। নতুন নতুন বিষয় আমাদের সামনে আসছে। নতুন আইন তৈরি হচ্ছে, তার হাত ধরে পরিকাঠামোরও বদল আসছে। সেই কারণে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের ঘটনাপ্রবাহ থেকেও প্রশ্ন আসে। যা সংবাদ না পড়লে জানা যাবে না। একইসঙ্গে পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটটাও মনে রাখতে হবে।


 


এবিপি লাইভ: কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভূমিকা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কি গুরুত্বপূর্ণ?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এই সব এলাকা সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ম-নীতি প্রতিফলিত হয়। তার মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো রয়েছে, যেমন দিল্লি। এই বিভিন্ন দিক কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে পলিটি পড়ার জন্য। যেমন সব কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে দুটো আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়েছে। যা অন্যান্য এলাকার থেকে খানিকটা হলেও আলাদা।  কেন্দ্রশাসিত এলাকা রাজ্যের তুলনায় সংখ্যায় কম হলেও তার গুরুত্ব কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কম নয়। এটা মনে রাখতে হবে।


 


এবিপি লাইভ: ভারতের সংবিধানে একাধিক ধারার উল্লেখ থাকে,  এই ধারা মনে রাখার উপায় কী?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: ধারা মনে রাখার সহজ উপায় বারবার সেটা পড়া। কারণ, এর প্রত্যেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। কোনওটা বাদ দিয়ে পড়ব, সেটা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র প্র্যাক্টিস না করার কারণে কারোর যদি সম্পূর্ণ সংবিধানও মনে থাকে, তাহলে সে কিন্তি ভুলে যেতে পারে। কেউ একটা তালিকা করে যদি প্রতিদিন সেটা  পড়ে তাহলে সেটা মনে রাখতে সুবিধা হবে। এভাবে আমি নিজেও পড়েছি।


 


এবিপি লাইভ: Constitutional body ভূমিকা কতটা?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: সংবিধানের উপর ভিত্তি করে সরকারের যে অংশ কাজ করছে সেটাই হল Constitutional body। বর্তমানে যার সংখ্যা ২০টা। সংবিধান পড়ার সময় তার সঙ্গে এই প্রত্যকটা বডি পড়ে ফেলার কথা আমি বলব। তাতে পড়া মনে রাখাটা সহজ হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে প্রতিটা বডিই সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।


 


এবিপি লাইভ: Constitutional body এবং Non-Constitutional body –র মধ্যে পার্থক্য বোঝার উপায় কী?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: প্রথমেই মনে রাখতে দুটো বডির কাজ কী। কীভাবে তারা কাজ করে, সংশ্লিষ্ট বডি কীভাবে তৈরি হল তা জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পড়া শুরুর প্রথমেই। এই কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকলেই পার্থক্য বোঝা সহজ হবে।


 


এবিপি লাইভ:  WBCS পরীক্ষার জন্য অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা সম্পর্কে জানাও কি প্রয়োজন?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: সাধারণভাবে অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা জানা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই অংশটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোনও রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের বিষয় জড়িয়ে থাকলে জানতে হবে পরীক্ষার্থীকে। এমন বিষয় যদি থাকে যে কোনও রাজ্যের কোনও পরিবর্তন সারা দেশের উপর প্রভাব তবে জানতেই হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়।


 


এবিপি লাইভ:  Polity পড়ার স্ট্র্যাটেজি কী হবে?


প্রতীক মুখোপাধ্যায়: পলিটি পড়া শুরু করার আগে মনে রাখতে হবে, একাধিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তা মনে রাখতে হবে। এই ধরনের তথ্য থাকে ইতিহাস এবং ভূগোলেও। প্রতিটা জিনিস পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কোনও ঘটনার ইতিহাস জানতে হবে। এভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানটাও তৈরি হয়ে যাবে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও ধারা বাদ দেওয়া যাবে না।


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI