প্রদ্যোৎ সরকার, নদিয়া: ১২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে অবশেষে ভারতীয় নাগরিকত্ব (Indian citizenship) পেলেন নদিয়াতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের (Bangladesh) এক যুবক। লোকসভা ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে  (Indian Citizenship Amendment Act) পরিণত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আর তারপরই এই বিষয় নিয়ে কেন্দ্রে আসীন বিজেপিকে কটাক্ষ করেছিল অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। প্রশ্ন তুলেছিল আদতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না চিহ্নিত করে দেশ থেকে করা হবে বিতাড়িত?


 এই অভিযোগ উড়িয়ে বারবার লোকসভা ভোট প্রচারে এসে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তথা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, "ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সমস্ত মানুষকেই আইন মেনে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।" মূলত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত মানুষ ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই আইনটি আনা হয়েছিল। যদিও এই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মতুয়াদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।


তাদের দাবি ছিল, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু, শর্তসাপেক্ষ নাগরিকত্ব বিল পেশ করে মতুয়াদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে। তবে সমস্ত সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে অবশেষে নাগরিকত্ব দেওয়া শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। বুধবারই জানা যায়, ধর্মীয় কারণে বাংলায় আশ্রয় নেওয়া প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেলেন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশ থেকে আসা এক যুবক। 


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে নদিয়া জেলার আসাননগর এলাকায় পুরো পরিবার নিয়ে চলে আসেন বিকাশ মণ্ডল নামে ওই যুবক। এরপর যখন নাগরিকত্ব আইন পাস হল তখন থেকেই তিনি চেষ্টায় ছিলেন এই দেশের নাগরিকত্বের শংসাপত্র পাওয়ার জন্য। মে মাসের ২৭ তারিখে কেন্দ্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার পোর্টালে অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে ভেরিফিকেশনের জন্য ডাকা হয় কৃষ্ণনগর পোস্টাল সুপারিনটেনডেন্ট অফিসে। সেখানে সমস্ত ডকুমেন্ট জমা করার করেছিলেন বিকাশ। তা খতিয়ে দেখার পর বৃহস্পতিবার তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়া হল। 


এপ্রসঙ্গে বিকাশ মণ্ডল জানান, তিনি এই নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট পেয়ে খুবই খুশি। তার কারণ, তিনি অন্য দেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে ভারতবর্ষে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অন্যদিকে বিকাশবাবুর স্ত্রী সাথী বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে বসবাসকারী হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার করা হত। সেই অত্যাচার থেকে বাঁচতেই ২০১২ সালে সপরিবারে চলে আসা হয় নদীয়ায়। তার পরবর্তীকালে যখন এই নাগরিকত্ব আইনের বিল পাশ হয় তখন থেকেই তিনি এবং তাঁর পরিবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন কীভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করে সার্টিফিকেট পেয়ে তাঁরা খুশি।  বিকাশ মণ্ডল ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেওয়া আরও একজনকে নাগরকিত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: CPM Agitation:পানীয় জলের হাহাকার শিলিগুড়িতে, মেয়রের পদত্যাগের দাবি বিক্ষোভ সিপিএমের